মাদক মামলায় বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করার প্রস্তাব

মাদকবিরোধী ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন বেনজীর আহমেদ। ঢাকা, ২৯ জুলাই। ছবি: ফোকাস বাংলা
মাদকবিরোধী ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন বেনজীর আহমেদ। ঢাকা, ২৯ জুলাই। ছবি: ফোকাস বাংলা

অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের সুপারিশ করেছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মাদকবিরোধী ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ওই কর্মশালার আয়োজন করে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। কারণ আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৮০০। বিশেষ আদালতের জন্য নতুন করে নিয়োগ দিতে হলে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেবে।’

দেশের ৩৬ হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দী আছে জানিয়ে বেনজীর বলেন, এই বন্দীদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার। সময় এসেছে এসব বন্দীর জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোনো দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গায় সে জেল হতে পারে।

চাকরিতে প্রবেশের সময় মাদকের পরীক্ষা করানো সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই ভালো খবর। পৃথিবীর কোনো দেশই মাদকমুক্ত নয়, তবে এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এটা আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েই আমরা ঘরে ফিরব।’

কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়েও ডোপ টেস্টের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই অ্যাকশন প্ল্যানটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এগুলো বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুব ভালো কাজ করছে। তাদের জন্য আরও ৬ হাজার ৭০০ জনবলের চাহিদা জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তাদের জনবল সাড়ে আট হাজারে দাঁড়াবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ মেসেজ হচ্ছে, “বাংলাদেশ থেকে মাদক শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।” আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। পাশাপাশি দেশে মাদকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।

নতুন মাদক আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদকের আইনটি ১৯৯০ সালের। এখানে অনেক কিছুই যোগ করা হয়নি। আমরা নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করছি। এখানে মাদকের অর্থলগ্নিকারী, সিসা বিক্রিসহ নানা অপরাধ যুক্ত হচ্ছে। আশা করছি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উঠবে আইনটি।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অধিদপ্তর এ পর্যন্ত মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ে জড়িত মোট ১৩ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১২ হাজারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সংখ্যাটা কম মনে হলেও আমাদের যতসংখ্যক ফোর্স আছে, সে অনুযায়ী অনেক বেশি। অধিদপ্তরের মোট ৫১টি গাড়ি রয়েছে। টেকনাফের মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় আমাদের টহল দেওয়ার মতো কোনো গাড়ি নেই। ১০ জন আনসার সদস্যকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে এই অধিদপ্তরকে কেউ চিনত না। এখন আমাদের কাজের জন্য অনেকেই অধিদপ্তরকে চেনে। কয়েক বছর আগেও আমাদের ২০০টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আমরা ১৭ হাজার আবেদন পাই। সম্প্রতি ২৪২ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দুই লাখ আবেদন করেছেন।’