নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রাজউক

‘হাতিরঝিল জনগণের সম্পদ, এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সকলের দায়িত্ব’—এমন নয়টি নির্দেশনাসহ একাধিক সাইনবোর্ড রয়েছে হাতিরঝিল এলাকায়। এর মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হাতিরঝিল রক্ষার দায়িত্ব সবার কাঁধে চাপিয়ে নিজের দায়িত্বটি ঠিকভাবে পালন করা থেকে হাত গুটিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে হাতিরঝিলের বিভিন্ন অংশে নকশাবহির্ভূতভাবে স্থায়ী-অস্থায়ী খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেডের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে নকশাবহির্ভূত স্থাপনার বিষয়টি রাজউককে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইনবোর্ডে শুধু নির্দেশনা না দিয়ে রাজউক তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হাতিরঝিলে একটিও অবৈধ স্থাপনা থাকত না। তাঁদের মতে, দেশে গর্ব করার মতো একটি প্রকল্প হাতিরঝিল। এটি যথাযথভাবে রক্ষায় রাজউককে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সরেজমিনে হাতিরঝিল এলাকা পরিদর্শন করে নকশাবহির্ভূত বেশ কিছু স্থাপনা চিহ্নিত করেছে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজউকের কাছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে ঝিলমিল, এমএফসি, ক্রআ থাই, তন্দুরি কাবাব, ফুড ট্রিপ ও ফুড মোবাইল নামের রেস্তোরাঁগুলো হাতিরঝিলের নকশাবহির্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ‘ঝিলমিল রেস্টুরেন্ট’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারের নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রবেশমুখে তৈরি করা হয়েছে। এই স্থাপনাটি সমগ্র প্রকল্পের যে সৌন্দর্য, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান ও দৃষ্টিকটু। ফুড মোবাইল ও তন্দুরি কাবাব রেস্তোরাঁ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ দুটি খালের পাশে আরসিসি কাঠামোর ওপর তৈরি করা হয়েছে। এসব রেস্তোরাঁর ডেকের তলায় ময়লা-আবর্জনা জমা ও অপরাধ সংগঠনের নিরাপদ আস্তানা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্রআ থাই নামের রেস্তোরাঁটি সম্পর্কে ভিত্তি স্থপতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁটির বর্ধিতাংশ পদচারী-সেতুর সিঁড়ির তলায় অথবা সরাসরি আলাদা স্থাপনা করে তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব রেস্তোরাঁর একটিরও পার্কিং-সুবিধা নেই। যত্রতত্র গাড়ি-মোটরসাইকেল পার্ক করা হচ্ছে। ফলে হাতিরঝিলের রাস্তায় স্বাভাবিক যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ওভারপাসের নিচে যেসব রেস্তোরাঁ বসানোর কথা ছিল, সেগুলোর আলাদা ডেক তৈরি করে খালের দিকে বসার জায়গা বানানো হয়েছে। এসব রেস্তোরাঁর খাবারের উচ্ছিষ্ট, আবর্জনা খালে ফেলে পানি ও পরিবেশ দূষিত করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে নকশাবহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার পাশে রাজউকের পক্ষ থেকে ৯ দফা নির্দেশনাসংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, সাইনবোর্ডে টাঙানো বিজ্ঞপ্তি আর বাস্তবতার যেন যথোপযুক্ত সমন্বয় থাকে। না হলে নিয়মনীতির বিজ্ঞপ্তির পাশেই অনিয়মের কার্যকলাপ সামগ্রিকভাবে হাতিরঝিলের পরিচালনব্যবস্থার দুর্বলতাকেই সামনে নিয়ে আসবে। ভিত্তির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন দেওয়ার পর রাজউক কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দের পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এখন পর্যন্ত রাজউক কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। হাতিরঝিলে নকশাবহির্ভূত স্থাপনা চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি এখন পর্যন্ত মাত্র একটি সভা করেছে। এরপর সভার জন্য একাধিকবার বলা হলেও সভার পরবর্তী সময়ও নির্ধারণ করা হয়নি।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এরপর পাঁচ মাসেও সেই প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হাতিরঝিলের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। নানা ব্যস্ততার কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।