ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে দুই সপ্তাহের বেশি বাকি। এখন হজযাত্রীরা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাসের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিজ উদ্যোগে এটা করছেন তাঁরা।

মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার পথে শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে হজরত আবু বকরকে (রা.) নিয়ে জাবালে সাওরে আশ্রয় নিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। জাবাল মানে পাহাড়, সাওর অর্থ গুহা। তিন দিন তিন রাত তাঁরা এই গুহায় কাটিয়েছিলেন। শত্রুরা খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছিল গুহার খুব কাছ পর্যন্ত। কিন্তু গুহামুখে মাকড়সার জাল দেখে ফিরে যায় তারা। এই তথ্য আমাদের অনেকেরই জানা।

সেই জাবালে সাওর কাবা শরিফ থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে। হজযাত্রীরা এই পাহাড় দেখতে যাচ্ছেন। এখানে একটি বড় সাইনবোর্ডে পর্বতে উঠতে নিষেধ করা আছে। লেখা আছে, এই পর্বতে আরোহণ করার মধ্যে কোনো অতিরিক্ত সওয়াব বা মর্তবা নেই। তবে এই উপদেশ হাজার হাজার দর্শনার্থীকে দমাতে কার্যত ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়।

মক্কার হারাম এলাকার কাছেই জাবালে নূর বা হেরা পর্বত; বাংলায় নূরের পাহাড়। এই পর্বতে ওঠা-নামা যে কত কঠিন, তা যিনি ওঠেননি, তিনি বুঝবেন না। অথচ নবী করিম (সা.) এই পর্বতে ওঠা-নামা করেছেন নিয়মিত। জাবালে নূর পাহাড়ে উঠতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেকের বেশি।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেখানে ধ্যান করতেন এবং পবিত্র কোরআনের আয়াত যেখানে নাজিল হয়েছে, সেসব জায়গা দেখতে যাচ্ছেন হজযাত্রীরা। এই পাহাড়ে আনুমানিক ১৫০ মিটার পাকা রাস্তা করা হয়েছে। পাকা রাস্তার পর শুরু হয়েছে পাহাড় কেটে তৈরি সিঁড়ি। এখানে সাইনবোর্ডে লেখা আছে, জাবালে নূর বা গারে হেরার উচ্চতা ৫৬৫ মিটার। অর্থাৎ অর্ধকিলোমিটারের বেশি উচ্চতা। পাকা রাস্তা পর্যন্ত দুই পাশে দোকানপাট, বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।

এ সিঁড়িপথটির কিছু দূর উঠে বসার জায়গা আছে। গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা মওদুদ হাসান জানালেন, ‘এ পথের বাঁকে বাঁকে ফকিরেরা শুয়ে-বসে ভিক্ষা চাইছেন। আরেক দল লোক আছেন, যাঁদের দেখলে মনে হবে তাঁরা রাজমিস্ত্রি। বালু, সিমেন্ট নিয়ে এমনভাবে অপেক্ষা করছেন, যেন আপনি সিঁড়ির ধাপটিতে ওঠার পর তিনি মেরামতের কাজ শুরু করবেন। কিন্তু এঁরাও মানুষের কাছে হাত পাতেন।’

পথে পানি, চা, ঠান্ডা পানীয় বিক্রি হচ্ছে। চায়ের দোকান ও বিশ্রামকেন্দ্রগুলো মূলত পাকিস্তানিদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। পথের ধারে অসংখ্য খালি পানির বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

সিরাজগঞ্জের ইমরুল হাসান জানালেন, ‘পাহাড়ে উঠতে উঠতে মনে হচ্ছিল, যখন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না তখন কেমন করে নবীজি (সা.) দীর্ঘদিন এ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত গুহায় যাতায়াত করেছেন। খাদিজা (রা.)-ই বা কেমন করে নবীজি (সা.)-এর জন্য এখানে খাবার দিয়ে যেতেন?’

হজযাত্রীরা আরও যেসব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছেন, সেগুলো হলো জান্নাতুল মাআলা কবরস্থান, মসজিদে জিন। জান্নাতুল মাআলা মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে। মক্কার বিখ্যাত কবরস্থান। এখানে কোনো কবর বাঁধানো নেই, কবরে কোনো নামফলকও নেই। কবরস্থানে কর্মরত একজন বললেন, এই কবরস্থানে রয়েছে বিবি খাদিজা (রা.)-এর কবর। হজ করতে এসে কেউ মারা গেলে আগে এখানে কবর দেওয়া হতো। স্থানসংকুলান না হওয়ায় এখন শারায়া কবরস্থানে (হাজিদের কবরস্থান) দাফন করা হয়।

জান্নাতুল মাআলা কবরস্থানের কাছে মসজিদে জিন। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, জিনেরা এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একাধিকবার এসেছেন। মসজিদটি বেশ সুন্দর। হজযাত্রীরা এখানে নামাজ আদায় করেন।

মক্কা উম্মুল জুদ এলাকায় কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা। সেখানে অনেক বাংলাদেশিও কাজ করেন। এখানে পবিত্র কাবা শরিফের পুরোনো গিলাফ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগ পর্যন্ত চলবে এই ভ্রমণ।