আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে চায় পুলিশ

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রাখতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ৪-জি থেকে ২-জি করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ছাড়াও পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ১০ দফা কৌশল নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যে অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ না করলে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বারবার ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু তারা সেটা শুনছে না। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে হয়তো বলপ্রয়োগের প্রয়োজন পড়তে পারে।

রাজধানীর কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস একদল শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার পর থেকে নয় দফা দাবি নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে। ঢাকার রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পুরোটাই এখন আন্দোলনরত কিশোরদের হাতে চলে গেছে। শিক্ষার্থীদের এই তৎপরতা ঢাকার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পুলিশের পক্ষ থেকে কিশোর-কিশোরীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

তবে গত বৃহস্পতিবার বিকেলেই মিরপুরে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে পুলিশ। আর এরপরই গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কিশোরদের থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ।

বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্রশাসন মনে করছে পরিস্থিতি এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। এ কারণে আজ শনিবার থেকে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ আক্রান্ত হলে বা পুলিশের স্থাপনায় হামলা হলে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগ করা হবে। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বলপ্রয়োগ করবে না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকাসহ সারা দেশের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে থেকে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা হবে। এ অবস্থায় নিজেরা বৈঠক করে পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই তাঁরা অভিযানে নামবেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশে থাকা অছাত্রদের শনাক্তও করবে পুলিশ। এসব কাজে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রাখতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা মনে করছেন শিক্ষার্থীরা ফেসবুক ব্যবহার করে আন্দোলনের প্রচার চালাচ্ছে। এ কারণে ফেসবুকে তারা বিভিন্ন মন্তব্য করছে, তাদের আইডি শনাক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ৪-জি থেকে ২-জি করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফোর-জি হচ্ছে ফোর্থ জেনারেশন বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি। এর আগের প্রজন্মের প্রযুক্তি ছিল টু-জি। যাতে ইন্টারনেটে ডেটা প্রবাহের গতি কম থাকে। পুলিশ মনে করছে, নেটওয়ার্ক ২ জি করে দিলে ফেসবুক ব্যবহার কমে যাবে, আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও ছড়াবে না।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের নয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবে না। এ জন্য গতকাল ছুটির দিনেও তারা রাস্তায় নেমে এসেছে।

পুলিশের এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়তা চাচ্ছে যে নিরাপদ সড়কের জন্য তারা যে দাবি করছে, তা যেন মেনে নেওয়া হয়। সেই আস্থাটা তারা যদি পায়, তাহলে সবাই ঘরে ফিরে যাবে। আস্থা পাচ্ছে না বলেই তারা রাস্তা থেকে যাচ্ছে না। তাদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরত পাঠাতে হবে। সেটা না করে বলপ্রয়োগ করা হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।