শাহবাগে আজকের মতো জমায়েত শেষ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যেও অবরুদ্ধ করে রেখেছে শাহবাগ মোড়। ছবি: সাইফুল ইসলাম
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যেও অবরুদ্ধ করে রেখেছে শাহবাগ মোড়। ছবি: সাইফুল ইসলাম

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের জমায়েত আজকের মতো শেষ বলে ঘোষণা করেছে শাহবাগে অবস্থানরত বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে আবার একই দাবিতে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
আজ শনিবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়। তারা জানায়, নয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগসহ তাদের সব দাবি মানতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে সঠিক, সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তারা বলছে, আন্দোলন চলাকালীন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে। এগুলোর দায়ভার কে নেবে, শিক্ষার্থীরা এমন প্রশ্ন তুলে ধরে।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সজল আলম গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ে বিষয়ে আমরা আশ্বাসে বিশ্বাসী না। নয় দফার মধ্যে একটি হলো নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। সরকার নয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। আমরা বাস্তবায়ন চাই।’

শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলছে, ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি হামলা বারবার চলতে থাকলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হবে। কারণ, এ অবস্থার জন্য তিনি দায়ী। এসব হামলার দায়ভার একমাত্র তাঁর।
শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন শেষে শাহবাগ মোড় থেকে চলে যায়। এরপর সেখানে আবারও যান চলাচল শুরু হয়।

আজ সকাল নয়টার পর থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে আসা শাহবাগ মোড়ের যানবাহনগুলোর কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে থাকে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল সেখানে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং আন্দোলনকারীদের কোনো বহিরাগতদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে পরামর্শ দেয়।
সদ্য নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল শাহবাগে আসে।

দলের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছেন। তাঁরা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তবে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে ভিন্নপথে পরিচালিত এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সে নির্দেশনাই দিয়েছেন।

সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য, যাতে তারা মিস গাইডেড না হয়। ওরা যে রাস্তায় নেমেছে, এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আক্ষেপ নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ওরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।’

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শাহবাগে এক বিদেশির গাড়ি ঘিরে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে থাকা প্রথম আলো প্রতিবেদক জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হলুদ নম্বরপ্লেটের একটি প্রাইভেট কার শাহবাগ মোড়ে আসে। দ্রুতগতির ওই গাড়িকে থামিয়ে শিক্ষার্থীরা লাইসেন্স দেখতে চায়। চালক তা না করে দ্রুতগতিতে মোড় পার হয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয়। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে গাড়িটির পিছু নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় জাদুঘরের মাঝে থাকা পদচারী-সেতুর নিচে আটকে দেয়। তারা গাড়িটিকে ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকে। ওই সময় গাড়ির ভেতরে একজন বিদেশি নারীকে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর শাহবাগ থানা-পুলিশ এসে গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যায়।