নিষিদ্ধ জেএমবি ফের সহিংস

গ্রাফিক্স: মো. জহির উদ্দিন
গ্রাফিক্স: মো. জহির উদ্দিন

ঘটনাস্থল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকা। পুলিশের আসামি আনা-নেওয়ার একটি গাড়ি (প্রিজন ভ্যান) পড়ে আছে। গাড়ির সামনের কাচে দুটি গুলির ফুটো। আর পেছনের দরজা বেয়ে রক্তের ধারা রাস্তা পর্যন্ত গড়িয়ে কালচে হয়ে রয়েছে। কালচে রক্তে ভিজে আছে পুলিশের টুপি। একটি বাক্সের ওপরে পুলিশের দুটি বন্দুক, ভাঙা।
গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১১টার চিত্র। এর এক ঘণ্টা আগে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে এবং এক পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে জঙ্গিরা। নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সহিংস এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আবার নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিল।
ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গি হলেন জেএমবি মজলিসে শুরা সদস্য সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন (৩৮), হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান (৩৫) ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিজান ওরফে বোমা মিজান (৩৫)। এঁদের মুক্তাগাছা থানার একটি বোমা হামলা মামলায় ময়মনসিংহের আদালতে হাজির করানোর জন্য গতকাল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাক ও মাইক্রোবাস দিয়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যানটি গতিরোধ করে জঙ্গিরা। তারা বোমা মেরে ও গুলি করে মুহূর্তে ধরাশায়ী করে চার পুলিশকে (চালকসহ)। এরপর ডান্ডাবেড়ি পরা তিন জঙ্গিকে মুক্ত করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এঁদের মধ্যে সালাহউদ্দিন ও হাফেজ মাহমুদ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ও বোমা মিজান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় আতিকুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। আহত হন আর্মড পুলিশের সুবেদার হাবিবুর রহমান ও কনস্টেবল সোহেল রানা। পরে তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, হাবিবুর রহমানের পেটে একটি গুলি আর সোহেল রানার ডান কাঁধসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে কিছু স্প্লিন্টারের ক্ষত রয়েছে।
অবশ্য ঘটনার পর পুরো এলাকায় পুলিশ অভিযান শুরু করে এবং বিকেল নাগাদ ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি নেতা হাফেজ মাহমুদ ও তাঁর তিন সহযোগীকে টাঙ্গাইলের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
জেএমবির ছয় শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করে আসছিলেন, জেএমবি বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু গতকালের এ ঘটনা সে দাবিকে উড়িয়ে দিল। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন যে জঙ্গি নিয়ে তাঁদের হিসাব-নিকাশ ভুল ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনার পর দেশের সব কারাগারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘটনার ছয় ঘণ্টা পর সিআইডির একটি দলকে (ক্রাইম সিন ইউনিট) ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এর আগে আসামিদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে ময়মনসিংহ পুলিশ। ওই এলাকায় মাইকে এ ঘোষণা প্রচার করা হয়।

জাহিদুল ওরফে বোমা মিজান, হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ও সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন
জাহিদুল ওরফে বোমা মিজান, হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ও সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন

যেভাবে ঘটনা
প্রিজন ভ্যানের চালক সবুজ মিয়া প্রথম আলোকে জানান, প্রথমে বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রাক এসে প্রিজন ভ্যানকে আটকে দেয়। ঠিক সে সময় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন সামনে এসে গুলি শুরু করে, তখন তিনি মাথা নিচু করে নিজেকে রক্ষা করেন। তিনি বলেন, তারা গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে চোখের পলকে আসামিদের নিয়ে চলে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কামরুল হাসান নামের স্থানীয় এক তরুণ জানান, তিনি ঘটনাস্থলের ২০ থেকে ২৫ গজ দূরে ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান, প্রিজন ভ্যানটির সামনে একটি সাদা মাইক্রোবাস ও পেছনে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তে মাইক্রোবাস থেকে নেমে কিছু লোক বোমা নিক্ষেপ ও গুলি করতে থাকে। তখনো ১০টা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি।
কী ঘটছে, বুঝে ওঠার আগেই কামরুল দেখেন, কালো পোশাক ও মুখোশ পরা ৮-১০ জন ব্যক্তি প্রিজন ভ্যানটির সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে গেছে। তাদের হাতে পিস্তল ও বোমা। একজন ভ্যানের সামনে গিয়ে পরপর দুটি গুলি করে। প্রিজন ভ্যানটির সামনে চালকের আসন ও পেছনে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়ানোর জায়গা বরাবর বোমা ছুড়ে দেয় অন্যরা। বিকট শব্দ ও ধোঁয়া হতে থাকে। এ সময় এনা পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাওয়ার সময় ওই জায়গায় এসে একটু দাঁড়ায়। তখন হামলাকারীদের একজন পুলিশের রাইফেল নিয়ে এর বাঁট দিয়ে বাসে বাড়ি মারে। এরপর বাসটি দ্রুত চলে যায়। বাকি হামলাকারীরা প্রিজন ভ্যানটি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে প্রিজন ভ্যানের ভেতরের দরজা খুলে কাঠের একটি বাক্স (টাঁকশালে টাকা নেওয়ার বাক্স) নামায়। এরপর ডান্ডাবেড়ি পরা তিন ব্যক্তি নিচে নামে। তাদের পরনে পাঞ্জাবি বা জোব্বার মতো পোশাক ছিল।
কামরুল আরও জানান, হামলাকারীরা ডান্ডাবেড়ি পরা ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে কালো মাইক্রোবাসে এবং বাকি একজনকে নিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে ওঠে। এ সময় পেছনে ঢাকামুখী আরেকটি বাস আসছিল। হামলাকারীরা সেই বাসের সামনে ককটেল ফাটায়। তারা বাসের চালককে কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকার জন্য বলে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ষাটোর্ধ্ব শামসুল হক প্রায় একই রকম বর্ণনা দেন। তিনি একজনকে পুলিশের একটি বন্দুক নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে এবং পরে সেটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বাড়ি মেরে ভেঙে ফেলতে দেখেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোজ্জাম্মেল জানান, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর তাঁরাসহ স্থানীয় লোকজন গিয়ে দেখেন, ভ্যানের পেছনে সিঁড়িতে এক পুলিশ সদস্যের মাথা ও দেহ ভেতরে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। আরেকজন ভ্যানের ভেতরে পড়ে আছেন। চালকের পাশে বসে থাকা সুবেদার হাবিবুর গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে খেতের দিকে চলে গেছেন। আর চালক সবুজ মিয়া তাঁর আসনেই বসে আছেন। পরে স্থানীয় লোকজন আহতদের ময়মনসিংহমুখী একটি গাড়িতে তুলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরপর বিজিবির দুটি গাড়ি ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন সেই গাড়ি থামিয়ে তাদের বিষয়টি দেখতে বলে। বিজিবির সদস্যরা সেখানে কিছু সময় ছিলেন। এর মধ্যেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান ত্রিশাল থানায় খবর দেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে আসে। এ খবর প্রচার হওয়ার পরপরই মহাসড়ক ও আশপাশের সড়কে সতর্ক অবস্থান নেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়।
চারজন গ্রেপ্তার ও জঙ্গিদের ব্যবহূত গাড়ি উদ্ধার
এরই মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের সখীপুর থানার পুলিশ কালো রঙের মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৬০৪৮) আটক করে। এর সামনে-পেছনে হলুদ কাপড়ে ইংরেজিতে ‘পিকনিক ২০১৪’ লেখা রয়েছে।
সখীপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে খবর পেয়ে সখীপুর থানার সামনে সখীপুর-ঢাকা সড়কে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এ সময় জঙ্গিদের মাইক্রোবাসটি অটোরিকশা ও পিকআপের ব্যারিকেডে ধাক্কা মেরে গাড়িগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মাইক্রোবাসটির সামনের বাম্পার খুলে পড়ে ঝুলতে থাকে। এ অবস্থায় ৫০০ গজ দূরে প্রশিকা কার্যালয়ের সামনে গাড়ি ফেলে পালায় তারা। ওই সময় লোকজন গাড়িচালক জাকারিয়াকে ধরে ফেলে। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
মাইক্রোবাস থেকে একটি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও চারটি তাজা বোমা, কাটা ডান্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ এবং কাটার যন্ত্র, চারটি মোবাইল ফোন, চারটি আলাদা নতুন সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। এরপর জাকারিয়ার দেওয়া তথ্যানুযায়ী পুলিশের কয়েকটি দল বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান শুরু করে।
দুপুর ১২টার মধ্যে তিন শতাধিক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র‌্যাব সখীপুরের বিভিন্ন গ্রাম, বাজার ও বনাঞ্চলে তল্লাশি শুরু করে। আড়াই ঘণ্টা পর সখীপুর-ঢাকা সড়কের তক্তারচালা বাজারের তল্লাশিচৌকিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে পলাতক আসামি রাকিব হাসানকে আটক করে পুলিশ।
থানার এসআই শ্যামল দত্ত জানান, নতুন কেনা জামা-কাপড় ও স্যান্ডেল পরা রাকিবের সদ্য দাড়ি কামানো মুখ দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তড়িঘড়ি করে দাড়ি কামানোয় তাঁর মুখের কয়েক জায়গায় কেটে যায় ও থুতনিতে কিছু লম্বা দাড়িও লেগে ছিল। এসব দেখে, হাতে-পায়ে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির দাগ দেখে রাকিবকে শনাক্ত করা হয়। থানায় এসে রাকিব নিজের পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এরপর তক্তারচালা বাজারে ঢাকামুখী একটি বাস থেকে রায়হান নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে সন্ধ্যায় টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে জাকারিয়ার স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টঙ্গী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, স্বপ্না স্বীকার করেছেন, তিনি ও তাঁর স্বামী দুজনেই জেএমবির সঙ্গে যুক্ত।
এরপর রাত ১০টায় ত্রিশালের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেলের সামনে থেকে জঙ্গিদের ব্যবহূত অপর মাইক্রোবাসটি (সাদা রঙের) পুলিশ উদ্ধার করে। তাতেও পিকনিক ২০১৪ লেখা ব্যানার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, দুপুর ১২টা থেকে তাঁরা সেখানে মাইক্রোবাসটি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে রাতে পুলিশকে খবর দিলে তারা মাইক্রোবাসটি নিয়ে যায়। মাইক্রোর ভেতর হ্যান্ডকাফ ও ডান্ডাবেড়ি এবং কাটার যন্ত্র পাওয়া গেছে।
কাশিমপুর থেকেই অনুসরণ
পুলিশের সন্দেহ, কাশিমপুর থেকে প্রিজন ভ্যানটিকে অনুসরণ করছিল জঙ্গিরা। কাশিমপুর কারাগারসংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী মাজেদ আলী জানান, তিনি সকাল সাতটার দিকে দোকান খোলেন। খোলার সময় কারাগারের সামনে খুব বেশি মানুষজন ছিল না। তবে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়ির পাশে কয়েকজনকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। তবে প্রায়ই এখানে আসামিদের লোকজন গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে।
এলাকার ব্যবসায়ী জিন্নাহ মিয়া জানান, সকালে পাঁচ-ছয়জন লোককে সন্দেহজনকভাবে হাঁটাহাঁটি করতে দেখেছেন। তারা একবার গাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, আবার গাড়িতে গিয়ে বসছিল। কারাগারের ভেতর থেকে সকাল পৌনে আটটার দিকে আসামি নেওয়ার একটি গাড়ি বেরিয়ে যায়। ৫-১০ মিনিট পর ওই মাইক্রোবাসটিও চলে যায়।
ঠুনকো নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
কাশিমপুর কারাগার থেকে এসব দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে মাত্র চারজন পুলিশ দিয়ে ঠুনকো নিরাপত্তায় ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার এ ঘটনায় এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার জান্নাতুল ফারদিন প্রথম আলোকে জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামি আদালতে নেওয়ার আগে কারাগার থেকে গাজীপুর পুলিশ সুপার বরাবর আসামিদের ধরন ও সংখ্যা অনুযায়ী পুলিশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। পুলিশ সুপার বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) ব্যবস্থা নিতে বলেন। ডিএসবির ম্যানুয়াল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও নিয়ম না মেনে গাজীপুর পুলিশ লাইন থেকে একজন এসআই, চালক ও দুজন কনস্টেবল দেওয়া হয়।
গাজীপুর পুলিশ লাইনের সংরক্ষিত পুলিশ পরিদর্শক (আরআই) সাইদুল করিম দাবি করেন, দেশে নির্বাচন চলায় পুলিশের সংখ্যা খুবই কম। তাই চালকসহ চারজন পুলিশ দেওয়া হয়। তবে তিনি বলেন, ওই আসামিদের ক্ষেত্রে আরও ১০-১২ জন পুলিশ দেওয়া উচিত ছিল।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল বাতেনও স্বীকার করেন, এই তিন জেএমবির নেতার নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি পুলিশ সদস্য দেওয়া উচিত ছিল।
মাত্র চারজন পুলিশ নিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের নিয়ে আদালতে যাওয়া নিরাপত্তা যথাযথ ছিল কি না—জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুর রহমান নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি গঠিত তদন্ত কমিটিই খতিয়ে দেখবে।
তদন্ত কমিটি গঠন: দুর্ধর্ষ এই তিন জঙ্গি নেতাকে মাত্র চারজন পুলিশ দিয়ে এত দূরের পথে পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে সরকার। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এ কমিটিকে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ময়মনসিংহ ও টঙ্গী প্রতিনিধি]

এ ক ন জ রে
জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)
১৯৯৮
শায়খ আবদুর রহমান জেএমবি প্রতিষ্ঠা করেন
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০১
সাতক্ষীরায় সিনেমা হল ও সার্কাস প্যান্ডেলে প্রথম নাশকতা চালায়
১ এপ্রিল, ২০০৪
‘জাগ্রত মুসলিম জনতা’ নামে রাজশাহীর তিন উপজেলায় কথিত চরমপন্থী নিধন অভিযানে নামে সংগঠনটি
১৭ আগস্ট, ২০০৫
৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫
সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
১৪ নভেম্বর, ২০০৫
ঝালকাঠিতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারককে হত্যা
২ মার্চ, ২০০৬
জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমান গ্রেপ্তার
৩ মার্চ, ২০০৭
জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ ছয় জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর
২৫ মে, ২০১০
বর্তমান আমির মাওলানা সাইদুর রহমানকে গ্রেপ্তার