শিক্ষার্থীদের নিয়ে শঙ্কিত প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ জেলার ৩০০টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০ জেলার ৩০০টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: ফোকাস বাংলা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, প্রধানমন্ত্রী মনে করেন এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। ওই পক্ষ নিজেদের স্বার্থে কোমলমতি এসব শিশুর ক্ষতি করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

১০ জেলার ৩০০ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। ন্যাশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট (ইনফো-গভর্নমেন্ট থার্ড ফেস) প্রকল্পের অধীনে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল চীন সরকারের সহযোগিতায় ১০ জেলার ৩০০ ইউনিয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুকে হারানোর ফলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের শিশুরা রাস্তায় নেমে এসেছে। যেহেতু ছোট ছোট বাচ্চারা এমনকি আমার মন্ত্রী, মিনিস্টার, এমপি তাদের যে যা বলছে, তারা কিন্তু তা মেনে নিচ্ছে। ওদের বাধা দিইনি। কারণ, তাদের অনুভূতি, সেন্টিমেন্ট, আমরা বুঝতে পারি। এ রকম একজন সহপাঠী মারা গেলে তাদের যে কষ্ট আর কেউ বুঝতে না পারুক আমার থেকে বেশি কেউ বুঝবে না। কারণ আমি তো আমার পরিবার হারিয়েছি।’

আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি তা আরও ভয়াবহ। আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ চলে এসেছে। সেখানে গাউসিয়া মার্কেট থেকে স্কুল ইউনিফর্ম বিক্রি হয়ে গেছে হঠাৎ করে। পলাশী থেকে আইডি কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। ওগুলো কারা নিচ্ছে? এরা কি আদৌ ছাত্র? কখনো মুখে কাপড় বেঁধে, হেলমেট পরে চেহারা ঢেকে ঢুকে পড়ছে। আমি এখন শঙ্কিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসছে। এখানে তাদের কাজটা কী? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা। আর যারা এগুলো করতে পারে তারা যে এসব কোমলমতি শিশুদের ওপর কোনো আঘাত করবে না, কোনো ক্ষতি করবে না, তার নিশ্চয়তা কী? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে, তারা নিজের স্বার্থে যেকোনো পথে যেতে পারে।

গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা শ্রেণি আছে যাদের কাজ হলো ঘোলাপানিতে মাছ ধরা। যারা চেষ্টা করছে এমন একটা পরিস্থিতিতে তারা কোনো একটা অবস্থান তৈরি করতে পারে কি না। কালকে তারা ফেসবুকে রিউমার (গুজব) দিল। আওয়ামী লীগের অফিসে চারজনের লাশ রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা হলো, কারা এ হামলা করল।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একদল লোক অপপ্রচার চালিয়ে দেশের পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলার চেষ্টা করছে। দয়া করে আপনারা কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। কোনো মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার যা-ই দেখেন বা শোনেন, প্রথমে তা যাচাই করে দেখতে হবে। দয়া করে কোনো কিছু যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না । বিশেষ করে আমি স্কুলশিক্ষার্থী ও তরুণদের এ অনুরোধ করছি।’

আজ ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাই পিতামাতা ও অভিভাবকদের সড়ক থেকে সন্তানদের ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘যাঁরা অভিভাবক, পিতামাতা, আপনাদের সন্তানের নিরাপত্তা আপনাদের দায়িত্ব। তাদের রাস্তা থেকে তুলে স্কুলে পাঠান, কলেজে পাঠান, পড়ালেখা করান। লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। তারা লেখাপড়া করুক।’

অভিভাবকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘অনুরোধ করব আপনারা ছেলেমেয়েকে ঘরে রাখেন। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট হয়েছে। আমরা তাদের বাধা দিইনি। কিন্তু এখন যখন একটি তৃতীয় পক্ষ নেমেছে। কোনো অঘটন ঘটায় এর দায় কে নেবে? সে জন্য আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই।’

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে ছাত্রদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ জানান। পড়াশোনা করাতে বলেন।