সরকারি হচ্ছে ২৭১টি কলেজ

>
  • বৃহস্পতিবার শেষবেলায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন
  • সারসংক্ষেপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছে 
  • আজকালের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি 
  • শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 
  • বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতিতে দ্বন্দ্ব

অবশেষে দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ সরকারি হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে দেশে সরকারি কলেজ ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯৮। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাসহ দেশে ৩২৭টি সরকারি কলেজ আছে।

তবে এসব কলেজের শিক্ষকদের সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডারভুক্তির সুযোগ রাখায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। আবার জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকেরা ‘আপাতত খুশি’ হলেও বিধিমালার কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যেও আছে আপত্তি। তবে তাঁরা চাইছেন আগে জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে হোক। এরপর পর্যালোচনা করে তাঁরা অবস্থান জানাবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়করণ হতে যাওয়া এক শিক্ষকনেতা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার শেষবেলায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন দেওয়া সারসংক্ষেপটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এখন প্রজ্ঞাপন জারির প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে ২ আগস্ট তাঁরা সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত সারসংক্ষেপটি মন্ত্রণালয়ে আসার কথা তিনিও শুনেছেন, তবে হাতে পাননি। হাতে পেলে রোববারই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

দেশের যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই, সেগুলোতে একটি করে কলেজ জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাতীয়করণের জন্য ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভুক্তির কাজ শুরু করা হয়। চূড়ান্তভাবে ২৭১টি কলেজ জাতীয়করণের অনুমোদন মিলেছে। এসব কলেজে ৮ থেকে ১০ হাজার শিক্ষক রয়েছেন।

এসব শিক্ষকের বদলি, পদায়ন ও মর্যাদা কী হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, জাতীয়করণ হতে যাওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি তাঁরা কোনোভাবেই মানবেন না। আর জাতীয়করণের তালিকায় থাকা কলেজের শিক্ষকেরা বলে আসছেন, তাঁদেরও আগের মতো ক্যাডার কর্মকর্তা করতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের জন্য ‘সম্মানজনক’ হয়, এমন কৌশল নিয়ে গত ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজশিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিধিমালা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে বেসরকারি কলেজের যেকোনো শিক্ষক শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে পিএসসির অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পিএসসির সুপারিশ পেলে তাঁকে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শিক্ষকেরা বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও দপ্তরে বদলি হতে পারবেন। তবে বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি হতে যাওয়া কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকেরা (বেসরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক নেই) নন-ক্যাডার হিসেবে নিজ নিজ পদে নিয়োগ পাবেন। তাঁদের চাকরি বদলিযোগ্য হবে না।

এই বিধিমালার পর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতাদের একটি অংশ খুশি। যদিও সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। সমিতির সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজশিক্ষকেরা বদলি হতে পারবেন না বলে প্রধানমন্ত্রী যে অনুশাসন দিয়েছিলেন, তাতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। কিন্তু চূড়ান্তভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই সব কলেজের শিক্ষকদেরও পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডারভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এটা নিয়েই তাঁদের আপত্তি।