পুলিশও আন্দোলনের সময় আক্রান্ত হয়েছে: আইজিপি

মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী
মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিক হামলার বিষয়টিরও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী।

আজ সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় শোক দিবস, ২১ আগস্ট ও ঈদুল আজহা নিয়ে নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে কী কী গুজব ছড়ানো হয়েছে কোন কোন আইডি থেকে, তার সচিত্র উপস্থাপনা দেখানো হয়। তবে সাংবাদিকদের প্রায় সব প্রশ্নই ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকেন্দ্রিক।

ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং সে সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশও আন্দোলনের সময় আক্রান্ত হয়েছে। রাজারবাগ, মিরপুরে পুলিশের পিওএম, কাফরুল থানায় হামলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই কী অবস্থায় পুলিশ কী ভূমিকা পালন করেছে, সেটা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদনে উঠে আসবে। তা ছাড়া সাংবাদিকদের যেখানে হামলা করা হয়েছে সেখানকার ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

আইজিপির কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি প্রথম দিন একদল তরুণকে হেলমেট পরে, রামদা, কিরিচ ও লাঠি হাতে তৎপর দেখা যায়। পরদিন ইস্ট-ওয়েস্ট ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছিল একটি পক্ষ। তাদের পুলিশের পরিপূরক বলে মনে হয়েছে বা মনে হয়েছে পুলিশ তাদের পরিপূরক। তাদের পরিচয় কী?

এর জবাবে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের। আমরা কাউকেই বলিনি। আমাদের পরিপূরক সাধারণ মানুষ। আমরা কখনোই কাউকে বলিনি আমাদের সঙ্গে এসে আমাদের পাশে এসে আমাদেরকে..., যদি প্রয়োজন মনে করি আমরা সাহায্য করার জন্য সাধারণ মানুষকে বলব, যদি কখনো মনে করি।’

জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করে। প্রথম দিকে তাদের এই কাজে পুলিশ সহযোগিতা দেয়। তারপর এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ভাষায় ‘হাইজ্যাক’ হয়ে যায়। এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে ও ব্যাপক গুজব ছড়াতে শুরু করে।

তৃতীয় পক্ষ কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘ছাত্রদের এই আন্দোলনকে ঘিরে যাদের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, তারাই তৃতীয় পক্ষ।’ গুজব নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যা করা দরকার তার সব করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশের বিশেষ শাখাসহ (এসবি) যে যে বিভাগে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ হয়, তাদের প্রত্যেককে সম্পৃক্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি সেল গঠন করা হচ্ছে। তা ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় সাইবার নজরদারি আরও বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।

সেফাত উল্লাহ সেফুর মতো যারা বিদেশ থেকে ‘গুজব’ বা কুৎসা রটাবে, তাদের ব্যাপারে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না? জানতে চাওয়া হলে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বিশ্বের যে প্রান্ত থেকে যে-ই এমন গুজব রটাক, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনে পুলিশকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে।