সিন্ডিকেটের কারণে ইজারা হয় না

পুরান ঢাকার ধূপখোলার ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসে গেছে। অথচ দরপত্র না পাওয়ায় এ হাট ইজারা দিতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।  ছবি: প্রথম আলো
পুরান ঢাকার ধূপখোলার ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসে গেছে। অথচ দরপত্র না পাওয়ায় এ হাট ইজারা দিতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ছবি: প্রথম আলো
>
  • ডিএসসিসির ৬ পশুর হাট
  • অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের জন্য পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
  • কিন্তু ছয়টি হাটের কোনোটিতেই আবেদন জমা পড়েনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে ছয়টি হাট এবারও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিএসসিসি জানিয়েছে, এ ছয়টি হাটের জন্য পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনোটিতেই আবেদন জমা পড়েনি।

এ অবস্থায় একটি চক্র ইজারার বদলে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাট বসাচ্ছে। এ চক্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। তাঁদের কারণে গত বছরও কয়েকটি হাটের ইজারা দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। হাট ইজারা দিতে না পারলে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

দরপত্র না পড়া হাটগুলো হলো ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠসংলগ্ন (গোপীবাগ-কমলাপুর) খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামের রাস্তার পূর্ব পাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলার ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন খালি জায়গায়।

গতকাল শুক্রবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, ধোলাইখাল, ধূপখোলা মাঠ, দনিয়া কলেজের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে খুঁটি ও শামিয়ানা টানিয়ে পশুর হাট বসাতে দেখা গেছে। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। দরদাম করছেন ক্রেতারা। তবে এখনো পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এই ছয়টি হাট এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে পৃথক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা ইজারা না নিয়ে হাটগুলোতে কোরবানির পশু বসাতে চাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের বাইরে কাউকে দরপত্র কিনতে বা জমা দিতে দিচ্ছে না।

গত বছর ঈদুল আজহার সময় যে হাটগুলো ইজারা দেওয়া যায়নি সেগুলোর মধ্যে লালবাগ-চকবাজার থানাধীন বেড়িবাঁধ ও রাজনারায়ণধর রোডে হাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিএসসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। সামসাবাদ মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গার হাট থেকে খাস আদায় করেছেন বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন। গোলাপবাগ মাঠসংলগ্ন সিটি করপোরেশন স্কুলমাঠ ও ডিএসসিসির খালি জায়গায় হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া কাউয়ারটেকে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. রুমেল, ঢাকা হাইড মাঠে জাহিদুল ইসলাম ও পোস্তগোলা শিল্পাঞ্চলে কামাল পারভেজ হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছিলেন। গত বছর কয়েকটি হাট ইজারা দিতে না পারায় প্রায় তিন কোটি টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিএসসিসির অনুমতি নিয়ে গত বছর পশুর হাট থেকে খাস আদায় করেছি। পরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ডিএসসিসি তহবিলে জমা দিয়েছি। এবারও হাটের জন্য মেয়রকে বলেছি। কিন্তু এখনো অনুমতি পাইনি।’ বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেনও গত বছর হাট থেকে খাস আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, হাট ইজারা দিলে ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বেশি হয়। আর খাস আদায় করতে গেলে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয় না। কারণ, এসব হাটে কোনো লক্ষ্যমাত্রা থাকে না। এই সুযোগে গত বছর ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব হাট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা।

ডিএসসিসি জানিয়েছে, চলতি মাসের ৭ তারিখ ছয়টি হাটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত  বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। চিঠি পেলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে ডিএসসিসি।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছয়টি হাটের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তাই এসব হাট থেকে খাস আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’