ট্রেনের ছাদে চড়ে সীতাকুণ্ডে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা

গত বৃহস্পতিবার চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে আহত হয় পারভেজ উদ্দিন। সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শুক্রবার ছবিটি তোলা হয়। ছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস
গত বৃহস্পতিবার চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে আহত হয় পারভেজ উদ্দিন। সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শুক্রবার ছবিটি তোলা হয়। ছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

পারভেজ উদ্দিন। বয়স ১৬-১৭ বছরের বেশি হবে না। গত শুক্রবার সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন পারভেজের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন সে মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। চোখ-মুখ ফুলে আছে। এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিরা রেলস্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় সে। পারভেজসহ গত ২০ দিনে সীতাকুণ্ডে ট্রেন থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, হতাহত পাঁচজনই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করতে সতর্ক করা হলেও অনেকেই তা শুনছেন না।

আহত পারভেজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সে জানায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখা থেকে চট্টগ্রামে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সে ছাদে ছিল। ওই সময় ছাদে অনেক মানুষ ছিল। কিন্তু কীভাবে সে পড়ে গেছে, তা মনে করতে পারছে না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও এখনো যোগাযোগ হয়নি।

কুমিরা রেলস্টেশন মাস্টার সাইফুদ্দিন বশর প্রথম আলোকে বলেন, পারভেজ চট্টগ্রামমুখী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। সে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আহলুকি গ্রামের নুরুল আবছারের ছেলে।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক অলিউর রহমান জানান, পারভেজের মাথার ডান পাশে, ডান চোখে ও কোমরে আঘাত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পারভেজকে অচেতন অবস্থায় ভর্তি করিয়েছেন। এখন সে আগের তুলনায় ভালো আছে। অল্প স্বল্প কথা বলছে। তবে তার আত্মীয়-পরিজন কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পারভেজ একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়েছে। কিন্তু সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

অলিউর রহমান আরও বলেন, ট্রেন থেকে পড়ে আহত অনেক রোগী হাসপাতালে আসেন। অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না হয়ে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, পারভেজ পড়ে যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে কুমিরা এলাকায় ঢাকামুখী অপর একটি ট্রেন থেকে ফজলুল কাদের (৪৫) নামের আরও একজন পড়ে যান। গত ২০ দিনে শুধু সীতাকুণ্ড অংশে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে গত ২৬ জুলাই সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞাতনামা (৩০) এক ব্যক্তি নিহত হন। ২৯ জুলাই সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা এলাকায় জাফর মিয়া (২২) নামের এক যুবক বগি থেকে ছাদে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে আহত হন। এর পরদিন ৩০ জুলাই সীতাকুণ্ডের পরাগ সিনেমা হলের কাছে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি (৪৮) আহত হন।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ওয়াসি আজাদ বলেন, এভাবে প্রায়ই ট্রেন থেকে পড়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন তাঁরা।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ পাশা হারুন জানান, গত বৃহস্পতিবারই এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে উদ্ধার করেছেন তিনি।

রেল পুলিশের সীতাকুণ্ড ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আন্তনগরের কোনো ট্রেন সীতাকুণ্ডের কোনো স্টেশনে দাঁড়ায় না। তবু সীতাকুণ্ড অংশে ট্রেন থেকে লোকজন পড়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছেন তিনি।

এএসআই আরও বলেন, আহত লোকদের বেশির ভাগই কথা বলার মতো অবস্থায় থাকেন না। হয়তো বৃষ্টিতে ট্রেনের ছাদ থেকে তাঁরা পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন। অথবা তাঁরা ছিনতাইয়ের শিকার হন বা নিজেরাই ছিনতাইকারী হতে পারেন। তবে গত কয়েক দিনের ঘটনায় এসব কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছেন। তাঁদের কাছে বৈধ টিকিট থাকার পরও ছাদে ভ্রমণ করছিলেন। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। লোকজন সচেতন না হলে তা বন্ধ করা কঠিন হবে।

ওসি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় থাকবে। অনেকেই ছাদে করে ভ্রমণের চেষ্টা করবেন। এ কারণে ছাদে না ওঠার জন্য সচেতনতামূলক লিফলেট ট্রেনের ভেতরে কামরায় লাগানো হচ্ছে।