কালাইয়ার ওজন ১৪ মণ

কালাইয়াকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
কালাইয়াকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

দেড় বছর আগে মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছিল কালাইয়াকে। তখন তার ওজন ছিল ৫ মণ। এখন ১৪ মণ। কালাইয়াকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। গায়ের রং কালো বলে তার নাম রাখা হয়েছে কালাইয়া। টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে টেকনাফের সবচেয়ে বড় কোরবানির হাটে মহিষ কালাইয়ার দাম হাঁকা হচ্ছে সাত লাখ।

সকাল থেকে এই হাটে দলে দলে কোরবানির পশু নিয়ে আসতে থাকেন লোকজন। বেলা তিনটার আগেই বিশাল ফুটবল মাঠটি ৭-৮ হাজার কোরবানির পশুতে ভরে ওঠে। পশু কিনতে আসেন দূরদূরান্তের কয়েক হাজার মানুষ।

কালাইয়ার মালিক টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ার কৃষক আবুল হাশেম। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছিল কালাইয়াকে। তখন তিনি ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে কালাইয়াকে কিনেছিলেন। এই হাটের সবচেয়ে বড় পশু কালাইয়া। দাম হাঁকা হচ্ছে ৭ লাখ টাকা। কিন্তু কয়েকজন ক্রেতা মহিষটি সর্বোচ্চ সোয়া ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছেন

আবুল হাশেম বলেন, পাঁচ লাখ টাকার কমে তিনি বিক্রি করবেন না। ৮-৯ মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার লাখ টাকায়। অথচ ১৪ মণ ওজনের বিশাল মহিষ চার লাখ টাকায় কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ। হাটে মহিষের চাহিদা বেশি, কারণ মাংস বেশি, আবার দামও কম।

হাটের ইজারাদার জহির আহমদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে এই হাটে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত চার দিনে পশু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে মহিষ আড়াই হাজার। রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কেনা হচ্ছে ১০-১২ হাজার গরু ও মহিষ। এ কারণে কোরবানির পশুর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। কিন্তু গরুর তুলনায় মহিষের দাম কম বলে অনেকে মহিষের দিকে ঝুঁকছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাটে বিক্রির জন্য আনা গরু-মহিষের মধ্যে ৭০ শতাংশ পশু মিয়ানমারের। টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপে মিয়ানমারের পশু আমদানির একটি করিডর রয়েছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ করিডরটি পরিচালনা করে।

গত রোববার এই করিডর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হয়েছে ১ হাজার ২১৪টি। এর মধ্যে মহিষ ২২৭টি। আজ সোমবার এসেছে ১ হাজার ৪০০টি। এর মধ্যে মহিষ ৩৪০টি। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১৯ দিনে করিডরে মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আমদানি হয়েছে ৭ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে মহিষ ৩ হাজার ১৫টি। প্রতিটি গরু ও মহিষের বিপরীতে শুল্ক বিভাগকে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করতে হয় ৫০০ টাকা করে। এ ক্ষেত্রে ৭ হাজার ৮৬৩টি পশুর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

টেকনাফ স্থল বন্দরের কাস্টমস সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মিয়ানমারের কোরবানির পশু আমদানিতে টেকনাফের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু বৈরী পরিবেশে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় কোরবানি পশু আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।

শাহপরীর দ্বীপ করিডরের পশু আমদানিকারক টেকনাফের শহীদুল ইসলাম ও সোহেল রানা বলেন, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি না হলে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারে পশুর সংকট দেখা দিত। মিয়ানমারের আকিয়াব, মংডু, রাচিডং, কেফতুসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু কিনে ট্রলারে করে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে তা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে আনা হয়। সাগর উত্তাল হলে পশু আমদানি বন্ধ থাকে। ২২ আগস্ট ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত করিডরে পশু আমদানি চলবে।

টেকনাফ পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ মনির বলেন, টেকনাফের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী কোরবানির জন্য মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার পশু কিনেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৮ হাজার পশু টেকনাফে আনা হলেও আরও ৩২ হাজারের মতো পশু সেখানে পড়ে আছে। সেগুলো এলে কোরবানির পশুর দাম কমতে পারে।