সৌদিতে আজ ঈদ উদযাপিত হচ্ছে

আজ ঈদ। যদিও হাজিদের ঈদের নামাজ আদায় করতে হয় না। মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফে) ঈদের নামাজ হয়েছে। মক্কায় বসবাসরত প্রায় সবাই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এদিকে হাজিরা হজের দিনগুলোতে করণীয় কাজগুলো করছেন।
আরাফাত ময়দানটি মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের ফরজ। এই ময়দানে নামিরা মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। হজের খুতবা টিভিতে দেখানো হয়। আমাদের তাঁবু যেহেতু মসজিদে নামিরা থেকে অনেক দূরে ছিল, তাই মসজিদের জামাতে আমরা শামিল হতে পারিনি। নিয়ম হচ্ছে, কেউ মসজিদের জামাতে শামিল হতে না পারলে নিজ নিজ তাঁবুতেই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করবে। আমাদের পরবর্তী কাজ সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেওয়া।
যেহেতু আমরা আরাফাত ময়দানের একপ্রান্তে ছিলাম, তাই ময়দানের মুজদালিফার দিকের প্রান্তে পৌঁছতে আমাদের পুরো মাঠ অতিক্রম করতে হলো। যতই অগ্রসর হই, ততই দেখি আমাদের চলার পথ ফাস্টফুডের খালি প্যাকেট এবং সফট ড্রিংকসের ক্যান দিয়ে কার্পেটের মতো ঢাকা পড়ে গেছে।
মাগরিব ও এশার নামাজ আমরা একসঙ্গে আদায় করলাম। আরাফাতের ময়দানে অথবা আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পথে মাগরিবের নামাজের সময় হলেও নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। মুজদালিফাতে পৌঁছার পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। এই মাঠেও কিছু দূর পরপর বাথরুম রয়েছে। সারা রাতই বাথরুমগুলোর সামনে লম্বা লাইন লেগে থাকে। নামাজ শেষে আমরা আশপাশ থেকে ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করলাম। জামারায় শয়তানের উদ্দেশে পরপর তিন দিন ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের টুকরা এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। ৭০টি পাথর সংগ্রহ করার পর আমরা শুয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। আমরা ফজরের নামাজ পড়ে দোয়া দরুদ পড়ে সূর্যোদয়ের কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা দিলাম। তাঁবুতে পৌঁছে বিশ্রাম ও নাশতা সেরে নিলাম। বড় জামারায় গিয়ে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করেছি। জামারা হলো মিনা ময়দানে অবস্থিত তিনটি স্তম্ভ। এগুলোর নাম জামারাতুল উলা বা ছোট জামারাহ, জামারাতুল উসতা বা মধ্যম জামারাহ এবং জামারাতুল কুবরা বা বড় জামারাহ।
পাথর নিক্ষেপের পরবর্তী কাজ হলো কোরবানি করা। আমরা যেহেতু আগেই কোরবানির টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়েছি, তাই আমাদের আর কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে যেতে হলো না। তাই আমরা জামারাহ থেকে বেরিয়ে মাথা মুণ্ডন করার জন্য নাপিতের দোকানের খোঁজ করলাম।
কোনো কোনো জায়গায় দেখলাম কিছু কিছু হজযাত্রী পয়সার বিনিময়ে অন্য হজযাত্রীদের মাথা মুণ্ডন করে দিচ্ছেন।
১০ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত করার জন্য মক্কার পথে রওনা হলাম। এটি হজের অন্যতম ফরজ কাজ। তাওয়াফ কাবা শরিফের তাওয়াফ শুরু করতে হয় হাজরে আসওয়াদ থেকে। ভিড়ের কারণে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে ইশারায় চুমু দিতে হয়। শুরু করলাম তাওয়াফ। প্রচণ্ড ভিড়। আগে যেখানে আমাদের তাওয়াফ ১৫ মিনিটের মধ্যে হয়ে যেত, সেখানে আজ আমাদের তাওয়াফ করতে লাগল ২ ঘণ্টা। আর সাই (অর্থাৎ সাফা মারওয়া সাতবার আসা যাওয়া করলাম।) করতে লাগল আরও ২ ঘণ্টা। এখান থেকে আবার জামারায় যেতে হবে পাথর ছোড়ার জন্য।
মসজিদুল হারামের চত্বরের এক প্রান্ত থেকে একটা পায়ে চলার পথ জামারার দিকে চলে গেছে। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশই পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা টানেল। টানেলের ভেতর পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা আছে। মাথার ওপর বিশাল আকৃতির ফ্যানগুলো থেকে বিকট শব্দে বাতাস ছাড়া হচ্ছে। এই টানেল দিয়ে হাঁটার সময় একটু ভয় ভয় লাগা অস্বাভাবিক নয়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক এক করে ছোট, মধ্যম এবং বড় জামারায় ৭টি করে পাথর নিক্ষেপ করলাম।
হাজিরা মিনায় দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ যেমন প্রতিদিন জামারায় তিনটি (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকে ৭টি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। মিনার কাজ শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।
প্রতিদিন হাজিদের ছবি, মৃত হাজির তালিকা ও বুলেটিনে তথ্য হালনাগাদ করা হয়
www.hajj.gov.bd এই ঠিকানায়।