স্বামী-স্ত্রীর 'বনিবনা' না হওয়ার বড় কারণ মাদক

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর ‘বনিবনা’ না হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী। এই বিভাগে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৮। রাজশাহীর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে বরিশাল বিভাগ। সেখানে বিচ্ছেদের হার হাজারে ১ দশমিক ৯। এটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য।

গত জুন মাসে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে ২০১৭ সালের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে বিবিএসের জরিপে ২০১৬ সালের তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। তখন তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে ছিল রাজশাহী।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া পাঁচজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা সবাই স্বামীর মাদকাসক্তির কথা বলেছেন। এর মধ্যে এক নারী নোটিশে লিখেছেন, ‘...বিগত এক বছর যাবৎ সে (স্বামী) মাদকাসক্ত এবং ভরণপোষণ দেয় না।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বিবাহের পর হইতে সে (স্বামী) নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায় আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করিয়া আসিতেছে।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগর এলাকায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩২৪টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ৪৬টি, জানুয়ারিতে ৭৬, ফেব্রুয়ারিতে ৬৯, মার্চে ৬১ ও এপ্রিলে ৭২টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বছরে গড়ে প্রায় ৭৫০টি বিবাহবিচ্ছেদের
ঘটনা ঘটে। বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করা নোটিশে বেশির ভাগ নারী-পুরুষ লিখেছেন, ‘সাংসারিক বনিবনা না হওয়া’।

তালাক প্রসঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন কয়েক মাস আগে একটি সভায় দুঃখ করে বলেছেন, প্রতিদিন সকালে উন্নয়নকাজের ফাইলে হাত দেওয়ার আগেই তাঁকে আট-দশটি তালাকের নোটিশে সই করতে হয়।

রাজশাহী শহরের মেহেরচণ্ডী এলাকার একটি সেলুনের কর্মচারীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে মাদকাসক্তির কারণে। হাদিরমোড় এলাকার এক অটোরিকশাচালকের বিবাহবিচ্ছেদের কারণও একই।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, বিচ্ছেদের প্রধান কারণ মাদক। এ ছাড়া ফেসবুক ও মুঠোফোনে অন্য কারও সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রীর প্রেমে জড়িয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে সংসারে। এতে ঘরে অশান্তি ও তিক্ততার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সংসার ভাঙছে। তিনি বলেন, যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাও রয়েছে।

কাজি আবদুল হাকিম বলেন, রাজশাহীতে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বেকারত্বের হার বেশি। যে কারণে বিয়ের সময় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যৌতুক দেওয়া-নেওয়া হয়। যৌতুকের টাকা নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়, শেষ পর্যন্ত তা বিবাহবিচ্ছেদের পর্যায়ে চলে যায়।

বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে যেসব পুরুষ সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই লিখেছেন, ‘স্ত্রী কথা শোনে না। অবাধ্য। চরিত্র খারাপ’।
মাদকাসক্তি, যৌতুক এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা না গেলে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা এড়ানো যাবে না বলে মনে করেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারা।