ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলেও দুপারে আটকা আট শ যানবাহন

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলরত ফেরিতে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। আজ দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ২৮ আগস্ট ২০১৮। ছবি: অজয় কুন্ডু
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলরত ফেরিতে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। আজ দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ২৮ আগস্ট ২০১৮। ছবি: অজয় কুন্ডু

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথের পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট এখনো কেটে ওঠেনি। টানা চার দিন ধরে নাব্যতা সংকট চললেও পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ফেরি চলাচল কিছুটা উন্নতি হলেও ঘাটের উভয় পাড়ে কমেনি যানজট। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে এই নৌপথে ১৯টি ফেরির বিপরীতে ১৫টি ফেরি স্বল্প যানবাহন ও ঢাকামুখী যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।

আজ উভয় পাড়ে আটকা রয়েছে ৮ শতাধিক যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও চালকেরা। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। তবে বৈরী আবহাওয়া দেখলে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করছে কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (এজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি চলাচল আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু সমস্যা কাটেনি। চ্যানেল ঘুরে ফেরিগুলোর আসতে বেগ পেতে হয়। ডুবচরে ঠেকে যায় ফেরি। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলীরা বলেছেন, আজ রাতে তাঁরা ড্রেজিং কাজ শেষ করে চ্যানেল খুলে দেবেন। তাহলে হয়তো সমস্যা সমাধান হবে।

শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ আরও বলেন, ‘বর্তমানে কে-টাইপের ৫টি, ডাম্ব ৪টি, মাঝারি ৩টি ও ছোট (ভিআইপি) ১টি ফেরি চলাচল করছে এবং আর দুটি রো রো ফেরি বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করে চলাচল করছে। তবে এই রো রো ফেরি দুটির ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরে মাঝিকান্দি বালুরচর হয়ে আসতে হয়। এতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা করে সময় চলে যাচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, নদীতে ড্রেজিং কাজ চলমান থাকায় ঈদের পর থেকেই এই নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। অন্য চ্যানেল দিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি ফেরি চলাচল করলেও সেখানে প্রবল স্রোতের মুখে পড়ছে ফেরিগুলো। এতে ব্যাহত হচ্ছে এই নৌপথে ফেরি চলাচল। বর্তমানে ১৯টি ফেরির মধ্যে চলছে ১৫টি। এ ছাড়া ৮৭টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও যাত্রীবাহী বাসগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কে-টাইপ ও ছোট (ভিআইপি) ফেরিগুলোতে যানবাহনের চেয়েও যাত্রীদের ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এ ছাড়া লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।

মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকাগামী যাত্রী সাব্বির আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটে ফেরিতে প্রচুর মানুষের চাপ। তাই মানুষের ভিড় সামলে লঞ্চঘাটের দিকে যাচ্ছি। লঞ্চে যে অবস্থা, মনে হয় না শান্তিতে পদ্মা পাড়ি দিতে পারব। তাই বাধ্য হয়ে মানুষ ভিড়ের মধ্যে গিয়েই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠব।’
বরিশাল থেকে চট্টগ্রামগামী কনক পরিবহনের চালক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘ঘাটে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এসে সিরিয়ালে বসেছি। এখন ১টা বাজতে চলল, ফেরিতে উঠতে পারিনি। ঘাটে বসে থাকলে যাত্রীরাও বিরক্ত হয়ে যায়। ফেরি না পেয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

স্পিডবোট ঘাটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী জুলকারনাইন বলেন, ‘লঞ্চে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোটেই যেতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে তারপর টিকিট নিয়ে স্পিডবোটে উঠতে হবে। ফেরি চলাচল ঠিক থাকলে আমাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিএস) সেলিম হোসেন বলেন, ‘এখন মোটামুটি ভালোই ফেরি চলছে। তবে তা কত সময় চলবে, বলা যাচ্ছে না। চ্যানেলে যেকোনো সময় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়ে হয়তো আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকাগামী যাত্রীরা ফেরি পেলেই উঠে পড়ে। তাই যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চাহিদা অনুসারে আমরা ফেরিতে তুলতে পারছি না। তাই ঘাটে যানজট রয়েছে।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কুশল কুমার সাহা বলেন, ‘ফেরি চলাচলে সমস্যা থাকায় ঘাট থেকে যানবাহনের চাপ কমছে না। তবে যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে ছোট গাড়ির চাপই বেশি। আমাদের পুলিশের একাধিক সদস্য যানজট নিরসন ও যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে।’