সড়ক যেন চিত্রশালা

সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এভাবেই আঁকা হয়েছে নানা ধরনের চিত্রকর্ম। ছবি: ছুটির দিনে
সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এভাবেই আঁকা হয়েছে নানা ধরনের চিত্রকর্ম। ছবি: ছুটির দিনে
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশ ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সমান্তরাল এগিয়ে গেছে। এই খুঁটিগুলোই বেছে নেওয়া হয়েছে ক্যানভাস হিসেবে। রংতুলিতে খুঁটির গায়ে আঁকা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম—শিল্পকর্মগুলোর প্রতিটিই যেন বলছে আলাদা গল্প।


কোনো খুঁটিতে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের নিরীহ কচ্ছপ। কোনোটিতে গাছ-লতা-পাতা আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছোঁয়া। একটি খুঁটিতে নজর কাড়ল ‘কসমিক লাফ’ বা মহাজাগতিক হাসির চিত্রকর্মটি। আরেক খুঁটিতে ‘স্টার ফেস’ অর্থাৎ নক্ষত্রমুখ। আরেকটি দেখা গেল, আঁকা হয়েছে ‘স্টোন সোসাইটি’ অর্থাৎ পাথরের সমাজ।

কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সমুদ্রসৈকত আর সবুজ পাহাড় দুই পাশে ফেলে টেকনাফের দিকে এগিয়ে গেছে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ। এই পথের পাশে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। এই খুঁটিগুলোতে আঁকা হচ্ছে এমন বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্ম।

চিত্রশিল্পী রনি আহমেদ
চিত্রশিল্পী রনি আহমেদ

মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি থেকে শুরু হয়েছে এই চিত্রকর্মের কাজ। শেষ হয়েছে উখিয়ার রেজুখাল সেতুর পাশে। দরিয়ানগর থেকে রেজুখাল সেতুর দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। ১০ কিলোমিটার সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি আছে প্রায় ৪০০টি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ খুঁটিতে চিত্রকর্ম আঁকা হয়েছে। অবশিষ্ট খুঁটিগুলোতে রং করা হয়েছে ছবি আঁকার জন্য। দৃষ্টিনন্দন এই চিত্রশালাটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মারমেইড ইকো রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবি)।

মারমেইড ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়কের পাশের খুঁটিগুলো খালি পড়ে থাকে। মানুষ খুঁটিতে পোস্টার লাগায়, চিকা মারে। নান্দনিকতা নেই। আমরা খুঁটিগুলোতে ছবি আঁকছি।’

এমন ছবিই আঁকা হয়েছে খুঁটিতে
এমন ছবিই আঁকা হয়েছে খুঁটিতে

চিত্রশিল্পকে জনসাধারণের কাতারে নেওয়ার জন্য অন্য রকম এ উদ্যোগটি আনিসুল হক চৌধুরীই হাতে নিয়েছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে মেরিন ড্রাইভের ১০০ কিলোমিটারজুড়ে এই আর্ট গ্যালারির কাজ সম্পন্ন করার ইচ্ছা আছে বলে জানালেন আনিসুল হক চৌধুরী। তিনি বলছিলেন, যে খুঁটিগুলো রং করা হয়েছে, সেগুলো বিদেশি চিত্রশিল্পীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা এসে তাঁদের দেশের ছবি এঁকে যাবেন খুঁটিতে।

উন্মুক্ত চিত্রশালার আরেকটি চিত্রকর্ম
উন্মুক্ত চিত্রশালার আরেকটি চিত্রকর্ম

এই খুঁটি চিত্রশালা তৈরির প্রধান কারিগর চিত্রশিল্পী রনি আহমেদ। তাঁকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় আরও দুজন চিত্রশিল্পী। রনি আহমেদ বলেন, পুরো জিনিসটি আসলে সিনেমার মতো। ফিল্মে রোল চলতে শুরু করলে ছবিটা দেখা যায়। এখানে মানুষ চললে ফ্লিমটা চালু হবে। একটার পর একটা গল্প আসতে থাকবে। চলন্ত গাড়িতে বসে যেন ছবিগুলো দেখা যায়, সেভাবে খুঁটির পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। হাঁটার সময় এই ছবি ভালোভাবে দেখা যায়। খুঁটির নিচের অংশ থেকে সাত-আট ফুট রং করে তাতে আর্ট করা হচ্ছে।