পৃথিবীতে এসেই শিশুটি গেল অন্য মায়ের কোলে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর আলো ভালো করে গায়ে মাখার আগেই মায়ের মমতার আলো হারাল এক নবজাতক। মা বলছেন, তিনি অসহায়। এ কন্যাশিশু লালন-পালনের ক্ষমতা নেই। তাই সচ্ছল কেউ ওর দায়িত্ব নিলে ভালো। সে অনুযায়ী শিশুটি এখন নিজের মা ছেড়ে অন্য মায়ের কোলে ঠাঁই পেয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ঘটনা এটি।

গত শনিবার বেলা তিনটায় বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন সন্তানসম্ভবা জেসমিন আকতার (১৮)। ওই দিন রাত সাড়ে আটটায় তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি সুস্থ কন্যাসন্তান প্রসব করেন। পরে নবজাতক সন্তানকে বাঁশখালী পৌরসভার এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি। এরপর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের নিবন্ধন বইয়ে তাঁর ঠিকানা বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়ন এবং স্বামীর নাম আবুল খালেক ছাড়া আর কোনো তথ্য তিনি দেননি। শেখেরখীল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও কেউ তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি।

হাসপাতালে গাইনি বিভাগে ভর্তি থাকা আরেক প্রসূতি শিরিনা আকতার বলেন, জেসমিন আকতার তাঁকে বলেছিলেন, পাঁচ বছর আগে তাঁর মা ক্যানসারে মারা গেছেন। বাবা আরেকজনকে বিয়ে করে তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি তাঁর বাবার বড় ভাইয়ের কাছে থাকতেন। বছরখানেক আগে নোয়াখালীর আবুল খালেক নামের এক ছেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। খালেক শেখেরখীল ইউনিয়নের ফাঁড়িরমুখ এলাকায় মাছ ধরার বোটে কাজ করতেন। পরে তাঁর সঙ্গে জেসমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের মাসখানেক পর স্বামীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সন্তান প্রসবের সময় হলে জেসমিন আকতার একাই হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্তান প্রসবের পর জেসমিন আকতার বলেছিলেন, ‘আমি খুব অসহায়। দুনিয়াতে আপনজন বলতে কেউ নেই। এই সন্তান লালন-পালনের ক্ষমতাও আমার নেই। আপনারা দয়া করে এমন কোনো পরিবারকে খবর দেন, যারা আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে।’

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স জয়তুন আরা বেগম বলেন, ‘জেসমিনের করুণ কাহিনি শুনে আমি তাঁর নবজাতককে আমার এক আত্মীয়ের হাতে তুলে দিয়েছি। আর্থিকভাবে তাঁরা সচ্ছল।’

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জুবুরিয়া শারমিন বলেন, ‘স্বাভাবিক প্রসবের সময় হাসপাতালে আমি উপস্থিত ছিলাম। মেয়েটি কোনোভাবেই তাঁর নবজাতককে নিয়ে যেতে চাইছিল না। কারণ, সে বলেছিল, তার আপনজন বলতে কেউ নেই। হাসপাতালের নার্সের এক আত্মীয় ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখানোয় তাঁদের হাতে নবজাতকটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। নবজাতকটিকে বিক্রি করা হয়নি।’

নবজাতকটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া আজিজ আহমদ বলেন, ‘আমার দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। মেয়েসন্তান না থাকায় নবজাতকটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। বাড়িতে আনার পরপরই নবজাতকের জন্য কাপড়চোপড়সহ ছয় হাজার টাকার বাজার করেছি।’