কাঁদলেন মোজাম্মেলের স্ত্রী, কিছুই বলতে পারলেন না

মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো
মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো

চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে থাকা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর স্ত্রী রিজু আক্তার চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এসে শুধু কাঁদলেন, দুই লাইনের বেশি বলতে পারলেন না।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শিশুকন্যা ফাতেমা তুজ জহুরাকে কোলে করে হাজির হন রিজু আক্তার।

রিজু আক্তার বলেন, ‌‘আমি এখন কোনো কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যেন আমার স্বামীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি সব যাত্রীর পক্ষ থেকে শুধু এটুকুই বলেছে যে রাস্তায় বের হলে যেন তাঁরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন। এমন নিরীহ একটি সংগঠনের নেতাকে যদি রিমান্ডে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে, তবে হতবাক হতে হয়। অথচ সমস্ত ক্ষেত্রে শোনানো হচ্ছে, সরকার গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখছে, তাদের উন্নয়নের কোনো তুলনা নেই।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘এমন উন্নয়ন হচ্ছে যে রাস্তায় প্রতিদিন ১০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। উন্নয়নের নানা ক্ষেত্র আছে, কিন্তু সব জায়গায় মানুষের সব সময় সম্পৃক্ত হতে হয় না। মানুষকে প্রতিদিন পথে নামতে হয়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয়। এটি মৌলিক অগ্রাধিকারের জায়গা। রাষ্ট্র যদি সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে না পারে, তবে আমরা কথা বলব না? আমরা সোচ্চার হব না?’ তিনি মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে মানবাধিকারকর্মী হিসেবে উপস্থাপন করে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মোজাম্মেল হক চৌধুরী যেসব তথ্য উপস্থাপন করতেন, তাতে সড়কের নৈরাজ্য প্রায়ই উন্মোচিত হতো। কয়েক বছর ধরে তিনি লেগে থেকে যে কাজ করে যাচ্ছিলেন, তিনি তো প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এ বিষয়গুলোও সরকার সহ্য করতে পারছে না।

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সামসুদ্দীন চৌধুরী দাবি করেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যে গুটিকতক অপশক্তি জিম্মি করে, তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু তাঁকে যাত্রী অধিকার আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে না পেরে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। সেটাও প্রমাণ করতে না পেরে আজ সোমবার ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিস্ফোরক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

কারা হুমকি ধমকি দিচ্ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক ও সমিতির সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চার বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আমাদের প্রতিবেদনগুলো সরকারের পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর তারা কোনো কিছু খুঁজে পায়নি। কিন্তু সরকারের কেউ কেউ বলেছেন, এটি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে সাম্প্রদায়িক শক্তির নেতা বলা হয়েছে। আমরা এগুলো বলতে চাই না, সব প্রমাণ গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আরেকজন সহসভাপতি খায়রুল আমিন। এ সময় মোজাম্মেল হক চৌধুরীর ছোট ভাই মনিরুল হক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।