মা-বাবার খোঁজে ডেনমার্ক থেকে পাবনায়

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও স্বজনদের খুঁজতে এসেছেন মিন্টো। স্বজনদের খুঁজে পেতে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন চান। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা। ছবি: হাসান মাহমুদ
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও স্বজনদের খুঁজতে এসেছেন মিন্টো। স্বজনদের খুঁজে পেতে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন চান। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা। ছবি: হাসান মাহমুদ

মিন্টো কারস্টেন সনিক (৪৭) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনমার্কের নাগরিক। সাত বছর বয়সে তিনি পাবনার নগরবাড়ি ঘাট থেকে হারিয়ে যান। এরপর ঠাঁই মেলে ঢাকার একটি শিশু আশ্রমে। সেখান থেকে ডেনিশ এক দম্পতি তাঁকে দত্তক নিয়ে ডেনমার্কে যান। সেখানেই বেড়ে ওঠেন মিন্টো।

কিন্তু জন্মভূমি ও আসল মা–বাবার প্রতি অন্য রকম টান অনুভব করেন মিন্টো। সেই টানে স্ত্রী অ্যানিটি হোলমিভেনকে (৪০) নিয়ে পাবনায় এসেছেন তিনি। মা–বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন পাবনার পথে পথে। ছোটবেলার ছবি দিয়ে ছাপানো লিফলেট বিতরণ করে খোঁজ করছেন পরিবারের।

বাবা-মাকে খুঁজতে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে এসেছেন মিন্টো কারস্টেন সনিক। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ
বাবা-মাকে খুঁজতে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে এসেছেন মিন্টো কারস্টেন সনিক। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১২ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ

এই দম্পতি আজ বুধবার দুপুরে আসেন পাবনা প্রেসক্লাবে। হারিয়ে যাওয়া মা–বাবার সন্ধান পেতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন মিন্টো। তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে তাঁর বয়স ছিল ৭ বছর। যতদূর মনে পড়ে পানির ওপর নির্মিত একটি টিনের ঘরে থাকতেন। তাঁদের ঘরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার গিয়ে নামত পাশের মাঠে। ওই হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে অথবা অন্য কোনো কারণে তিনি হারিয়ে যান। ঘুরতে থাকেন নগরবাড়ি ঘাটে। সেখান থেকে কামরুল হোসেন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তাঁকে উদ্ধার করে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাঁটারি বাজারের এক শিশু আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে কারস্টেন ও বেনফি নামের এক ডেনিশ দম্পতি তাঁকে দত্তক নিয়ে ডেনমার্কে চলে যান। এরপর থেকেই সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন। বিয়ে করেন চিকিৎসক অ্যানিটিকে। আর মিন্টো পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। তাঁদের সংসারে ২৩ বছরের মেয়ে ও ১৮ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তিনি নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে ভুলতে পারেননি। তাই তাঁদের সন্ধানে বাংলাদেশে এসেছেন।

মিন্টো বলেন, ‘ডেনমার্কে পালক মা–বাবা ও নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুব সুখেই আছি। কিন্তু মনের অজান্তেই অন্তর এখনো কেঁদে ওঠে জন্মদাতা বাবা-মা ও স্বজনদের জন্য। মনে হয় তাঁদের পেলেই জীবনটা পূর্ণ হবে।’

মিন্টোর বাংলাদেশি বন্ধু স্বাধীন বিশ্বাস বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে মিন্টোর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। সেভাবে বাংলা ভাষাও জানেন না মিন্টো। তাই বাংলায় স্পষ্ট করে কিছুই বলতেও পারছেন না। তবে দেশে এসে খোঁজ-খবর নিয়ে কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছেন। সে সূত্র ধরেই বাবা-মা ও স্বজনদের খুঁজতে রাস্তায় নেমেছেন তিনি।

মিন্টোর স্ত্রী অ্যানিটি হোলমিহেভ বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে চাই, মিন্টো যেন তাঁর মা–বাবাকে খুঁজে পান।’

এ বিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তিনি (মিন্টো) পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আমরা তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে রাখছি। তাঁদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি।’