শর্তে আটকে আছে অনুমোদন

>

• নীতিমালা প্রণয়নের আগে রাইড শেয়ারিং সেবা জনপ্রিয়তা পায়
• নীতিমালা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনের আবেদন করে
• অনুমোদনের আবেদন করেছে ১১টি প্রতিষ্ঠান
• প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার কিছু শর্ত পূরণ করতে পারছে না
• ৩ শর্ত নিয়ে জটিলতা

নীতিমালা প্রণয়ন হওয়ার ছয় মাস পরও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমোদন পায়নি অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সংস্থাটি জানিয়েছে, নীতিমালার বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণ না করায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিআরটিএর দেওয়া কিছু শর্ত পূরণ করার ক্ষেত্রে আছে প্রক্রিয়াগত জটিলতা।

কোনো বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের পর অনুমোদন না নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অবৈধ। কিন্তু রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নের আগে এই সেবা জনপ্রিয়তা পায়। নীতিমালা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনেরও আবেদন করেছে। কিন্তু বিআরটিএর শর্ত পূরণ নিয়ে জটিলতার কারণে অনুমোদনপ্রক্রিয়া ঝুলে আছে। নীতিমালা হওয়ার পরও অ্যাপভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বিআরটিএর।

অ্যাপভিত্তিক এই পরিবহনসেবাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাইড শেয়ারিং নীতিমালার খসড়া তৈরি করে বিআরটিএ। যেটি পাস হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। অনুমোদন (এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট) পেতে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এগুলো হলো পাঠাও লিমিটেডের ‘পাঠাও’, সহজ ডটকমের ‘সহজ রাইডস’, চালডাল লিমিটেডের ‘চালাও’, ওভাই সলিউশন লিমিটেডের ‘ওভাই’, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেডের ‘ফাস্ট ড্রাইভ’, গোল্ডেন রেন লিমিটেডের ‘অটো রাইড’, রাইজার অপারেশন বিডির ‘উবার’, রাইড শেয়ার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ‘রাইডার’, পিক মি লিমিটেডের ‘পিক মি’, ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেডের ‘ইজিয়ার’। বর্তমানে এগুলোর কার্যক্রমও চলছে। সর্বশেষ আবেদন করেছে আকিজ অনলাইন লিমিটেডের ‘গাড়ি ভাড়া’।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত আবেদন পাওয়ার পর ১০টি প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক কার্যালয় পরিদর্শন করে এগুলোর অবকাঠামো, পরিচালনা পর্ষদ ও লজিস্টিক সাপোর্ট খতিয়ে দেখেছে তারা। বিআরটিএ বলছে, অ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য বাংলাদেশেই সংরক্ষণ করতে হবে। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহারকারীর তথ্যর যথার্থতা যাচাই করতে হবে এবং যাত্রীদের জরুরি মুহূর্তে সেবা দিতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো শর্তগুলো এ মুহূর্তে পূরণ করতে পারছে না।

নীতিমালা অনুযায়ী রাইড শেয়ারিং অ্যাপে দেওয়া যাত্রী কিংবা চালকের ব্যক্তিগত তথ্য বাংলাদেশের মধ্যেই সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া ৯টি প্রতিষ্ঠানই বিদেশের সার্ভার ব্যবহার করে। সে ক্ষেত্রে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা করছে বিআরটিএ।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশের ভেতরে সার্ভার ব্যবহার করার মতো অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। আমাজনের সার্ভার ব্যবহার করে ‘সহজ রাইডস’। এর টেকনিক্যাল টিমের জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং) কামরুজ্জামান রিপন বলেন, তথ্য বেহাত হওয়ার ব্যাপারই যদি থাকত তাহলে বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য দেশের সার্ভার ব্যবহার করত না।আবার সব তথ্যই যদি বিনিময় করা হয় তাহলে ব্যবসায়িক গোপনীয়তার নীতিমালাও ঠিক থাকে না।

নীতিমালার অনুচ্ছেদ ‘খ’-এর ১ ও ১১ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অ্যাপে এমন একটি এসওএস (জরুরি বার্তা) সুবিধা থাকতে হবে যার বোতাম স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে মোটরযানচালক ও যাত্রীর তথ্য এবং জিপিএস লোকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ চলে যাবে। বিআরটিএ বলছে, প্রতিষ্ঠানের অ্যাপে এমন সুবিধা থাকলেও জিপিএস লোকেশন শুধু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই দেখতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ তথ্য না পাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সেবাও নিশ্চিত করতে পারছে না।

একই অনুচ্ছেদের ৮-এর ‘খ’-তে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের যানবাহনের চালক হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনকে তথ্য দিতে হবে।

একটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে আবার তাদের আলাদা নীতিমালা আছে। সেগুলোও পূরণ করতে হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের যে তথ্য তাদের সঙ্গে বিনিময় করতে হবে সেগুলো গ্রহণ করার ব্যবস্থাও তো এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি।

পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন মো. ইলিয়াস বলেছেন, ‘এই প্রক্রিয়াগুলো শুধু বিআরটিএ কিংবা রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে না। এর সঙ্গে যেহেতু আরও কয়েকটি বিভাগ জড়িত আছে, সে ক্ষেত্রে তাদেরও প্রস্তুত হতে হবে। এই প্রক্রিয়া যত দ্রুত হবে আমাদের কাজও তত দ্রুত শেষ হবে।’

বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) নূরুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ নীতিমালার শর্ত পূরণ হচ্ছে না ততক্ষণ কাউকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। অনুমোদন দিতে আমরা প্রস্তুত। মাঝের যে প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলো শেষ করার জন্য আবেদনকারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করা হয়েছে।’