কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত, ১ কিমি যানজট

পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত আর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: অজয় কুন্ডু।
পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত আর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: অজয় কুন্ডু।

পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত আর নাব্যতা সংকট থাকায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এই নৌপথে চলাচলরত ১৯টি ফেরির মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র তিন থেকে চারটি ফেরি। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় ঘাটের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।

এদিকে ফেরি না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েছেন এই নৌপথে চলাচলরত যাত্রী ও চালকেরা। তবে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাকের টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে চার শতাধিকের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ায় চরম দুর্ভোগের পড়েছেন ট্রাকের চালকেরা।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, ‘পদ্মায় ফেরি না চলার মতো অবস্থা। দিনে দুই-তিনটা ফেরি এপার-ওপার করছে। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি আমরাও। একদিকে নদীতে তীব্র স্রোত, অন্যদিকে চ্যানেল মুখে নাব্যতা সংকট। ফলে, ঘাটে ট্রাকের চাপ কমানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, ছোট-বড় মিলিয়ে ঘাটে কয়েকশ পদ্মা পারাপারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। অন্যদিকে, বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করে ফেরি চলাচল করায় পদ্মায় তীব্র স্রোতের মুখে পড়ছে ফেরিগুলো। এ জন্য সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঘাটের উভয় পাড়ে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়েছে। এদিকে ১৯টি ফেরির মধ্যে তিনটি ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস, অ্যাম্বুলেন্স ও পচনশীল দ্রব্যের যানবাহনকে অগ্রাধিকার দিকে পার করা হচ্ছে। এদিকে নদীতে নাব্য সংকট দূর করতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

চাহিদা অনুযায়ী ফেরি চলাচল না থাকায় পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ আটকা পড়েছে ছয় শতাধিক যানবাহন। তবে স্বাভাবিক রয়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল।

আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। তবে টার্মিনাল কানায় কানায় ভর্তি পণ্যবাহী ট্রাকে। ঘাটের পন্টুনগুলোয় দেখা যায়নি কোনো ফেরি। এক নম্বর ঘাটের পন্টুনে একটি রো রো ফেরি ও তিন নম্বর ঘাটে একটি কে-টাইপের ফেরি নোঙর করে রাখা। লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। তবে পদ্মা পারাপারে অপেক্ষায় রয়েছে ছোট-বড় বহু যানবাহন।

চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক রিপন কাজী বলেন, ‘ঘাটে ছয় ধরে আটকা পড়েছি। ঘাটের লোকেরা বলছে স্রোতের কারণে ফেরি কম চলে। তাই আমাদের বিকল্প পথ ধরে যেতে বলছে। কিন্তু লাইন ভেঙে আমাদের বিকল্প পথ ধরে যাওয়া সম্ভব না।’

ঢাকাগামী ট্রাকের চালক মো সুজন বলেন, ‘খুলনা থেকে ১০ দিন আগে ঘাটে এসেছি। এখানে থাকতে হচ্ছে, ঘুমাতে হচ্ছে। এখানে হোটেলের খাবারের খুব দাম। বেকার এভাবে কত দিন পড়ে থাকব? আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।’

মুন্সিগঞ্জগামী একটি মাইক্রোবাসের চালক সিরাজ মুনশি বলেন, ‘সকাল ১০টায় ঘাটে আসছি। ঘাটে যা হাল, কোনো ফেরিই তো আসছে না। কখন ফেরিতে উঠব, কখন পদ্মা পাড়ি দেব, তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। ঘাটের কাউকে জিজ্ঞাসা করলে তারা অকথ্য ভাষায় কথা বলে। তাই নিরুপায় হয়ে ঘাটে বসে আছি।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কুশল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ঘাটের অবস্থা বেশি খারাপ। ফেরি চলছেই না। যা দুই-একটা চলে, তা দিয়ে সব যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় টার্মিনাল ও ঘাটের সংযোগ সড়কে আটকা পড়েছে শতাধিক যানবাহন। তবে ট্রাক টার্মিনালে পণ্যবাহী চার শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে।’