ঢাকায় গৃহকর্মী শিশুকে অমানুষিক নির্যাতন, শিশুটি এখন ওসিসিতে

নির্যাতনের শিকার শিশুটি। ছবি: সংগৃহীত
নির্যাতনের শিকার শিশুটি। ছবি: সংগৃহীত

শিশুটিকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। তার হাতের আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়েছে ও তপ্ত খুন্তি আর ব্লেড দিয়ে শরীরে জখম করা হয়েছে। শিশুটির মা ৯ সেপ্টেম্বর থানায় এসব অভিযোগ করেন। ১০ বছর বয়সী গৃহকর্মী ওই শিশুটিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

শিশুটির মায়ের অভিযোগ পাওয়ার পরদিন পুলিশ গৃহকর্তাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকার আদালত তাঁদের কারাগারেও পাঠিয়েছেন। এঁরা হলেন আল মামুন (৪০) ও নাজমা ইয়াসমিন (৩২)। অবশ্য পলাতক বিলকিস হোসেন (৬০) নামের এক নারী। তিনি গৃহকর্ত্রী নাজমার মা।

পুলিশ বলছে, শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি আছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, পলাতক আসামিকে ধরার জোর চেষ্টা করছেন তিনি। যে কোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। 

শিশুটির বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর মায়ের কাছে সে বড় হতে থাকে। গত বছর আসামিদের বাসায় তাঁকে কাজে দেওয়া হয়। মামলায় শিশুটির মা বলেন, এক বছর ধরে আসামিদের বাসায় কাজ করে আসছিল। ৫ সেপ্টেম্বর তিনি খবর পান, তাঁর মেয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি আছে। খবর পেয়ে গাজীপুর থেকে তিনি হাসপাতালে আসেন। দেখেন, তার মেয়ের শরীরে গরম খুন্তির ছোপ ছোপ দাগ। মাথা ও কোমরে বটির আঘাতের চিহ্ন। শিশুটি তাঁকে জানায়, রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে হাতে আঘাত করা হয়। ডান হাতের কবজি ও মধ্যমা আঙুল ভেঙে ফেলে তাঁরা। এ কারণে হাত দুটি ঠিকমতো নাড়াতে পারে না।
শিশুটির মায়ের অভিযোগ, শিশুটিকে ঠিকমতো খাবার না দিয়ে বাথরুমে আটকে রাখা হতো। গরম পানি দিয়েও শরীর ঝলসে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ গৃহকর্তা মামুন ও তাঁর স্ত্রীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চাইলে আদালত এক দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলে, শিশুটির মায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বাসায় শিশুটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক রেখে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতন করায় শিশুটির মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার অবস্থা তৈরি করে আসামিরা। দু’জনে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকর্তা মামুন একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকতেন তাঁর স্ত্রী নাজমা ও তাঁর মা বিলকিস। শিশুটি তাঁকে জানিয়েছে, কথায় কথায় বিলকিস তাকে বেশি মারধর করেছে। শিশুটিকে নির্যাতনের ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।