রচনা লিখে ব্রোঞ্জ পদক

ফারহান ইশরাক। ছবি: সংগৃহীত
ফারহান ইশরাক। ছবি: সংগৃহীত

মাত্রই পার হয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের বৈতরণি, কতই আর বয়স, অথচ এরই মধ্যে বিদেশ অবধি ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজের নাম। পেয়েছেন পুরস্কার। তাও আবার লেখালেখি করে! ব্যাপারটা যেন বিশ্বাসই হয় না ফারহানের বন্ধুদের—‘সত্যিই তুই রচনা লিখে পুরস্কার পেয়েছিস? তাও আবার বিদেশি পুরস্কার? দেখা দেখি পুরস্কারটা?’

ফারহান ইশরাককে তখন কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া ব্রোঞ্জ পদক ও সনদপত্র দেখাতে হয়।

সম্প্রতি এই এক মধুর বিড়ম্বনায় পড়েছেন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ফারহান ইশরাক। দিনের অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষকে এই পুরস্কার দেখাতে দেখাতে। ফারহান বলেন, ‘ভালোই লাগছে। সারা পৃথিবীর মেধাবী তরুণদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি, এই খবর শুনে অনেকেই বিরাট একটা হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। দেখতে ভালোই লাগে।’

অথচ ফারহান নাকি ভাবতেই পারেননি যে তিনি পুরস্কার পাবেন। আবেদনের একেবারে শেষ দিনে অনলাইনে রচনা জমা দিয়েছিলেন আর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কি একটা প্রযুক্তিগত ভুলও করে ফেলেছিলেন। ফলে, মনে মনে ভেবেছিলেন, ঠিকঠাকমতো জমা দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরে আরসিএস (রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি) এর পক্ষ থেকে একটি প্রাপ্তিস্বীকার ই-মেইল পেয়ে ফারহান নিশ্চিত হন যে রচনাটি ঠিকঠাকমতো পৌঁছেছে।

বাহ! গল্পটা মজার তো! তারপর?

ফারহান হাসতে হাসতে বলেন, ঘটনা আরও আছে। ‘এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতার খবর। এমন খবর দেখে আমার পক্ষে বসে থাকা কঠিন। কাগজ-কলম নিয়ে তখনই লিখতে বসে হঠাৎ মনে পড়ে, আরে, আমার না এক মাস পরই এইচএসসি পরীক্ষা! এখন এসব রচনা লিখে সময় নষ্ট করা কি ঠিক!’ বলছিলেন ফারহান।

তারপর আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত পড়ে তিনি জানতে পারেন, রচনা দাখিল করার শেষ সময় জুনের ১ তারিখ। ফারহান ভাবেন, সময় আছে হাতে। আগে পরীক্ষাটা শেষ হোক।

ফারহানের উচ্চমাধ্যমিক তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। তারপর শুরু হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। ব্যবহারিক শেষ হতে হতে জুন মাস আসি আসি প্রায়। রচনা লেখার সময় আর মেলে না! উপায়ান্তর না পেয়ে ব্যবহারিকের শেষ দিনেই রচনা লিখতে বসে যান ফারহান। ‘ইচ্ছে ছিল প্রথমে কাগজে-কলমে লিখে তারপর ল্যাপটপে কম্পোজ করব। কিন্তু সময় ছিল না বলে তাড়াহুড়ো করে ল্যাপটপেই লিখে ফেলি।’

ফারহান জানান, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বিভাগ ছিল দুটি—সিনিয়র ও জুনিয়র। তিনি সিনিয়র বিভাগে অংশ নেন। রচনার বিষয় ছিল ‘শিক্ষা কীভাবে ভবিষ্যৎ উন্নয়নে কাজ করে’।

ইংরেজিতে লেখা রচনাটি পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন ফলাফল জানার জন্য। অবশেষে সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে আরসিএসের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফারহান জানতে পারেন, তিনি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন। বিজয়ীদের তালিকায় নিজের নাম দেখে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ‘মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি!’ বলছিলেন ফারহান।

এ রকম আরও এক স্বপ্নময় স্মৃতি মনে পড়ে তাঁর। সেটা ২০১৪ সাল। এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগে রংপুর অঞ্চলে সেরাদের সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তখনো বিজয়ীর তালিকায় নিজের নাম দেখে ‘স্বপ্ন-স্বপ্ন’ মনে হয়েছিল।

এই সব স্বপ্নের ঘোরে থাকতেই ভালো লাগে তাঁর। কিন্তু সামনেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। তাই স্বপ্নকে আপাতত দূরে রেখে রাতদিন পড়াশোনা চলছে। ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে দেখতে চান ফারহান। প্রস্তুতিও চলছে সে লক্ষ্যেই। ‘দেখা যাক, কী হয়!’ মৃদু হেসে বলেন ফারহান ইশরাক।