সাংসদ আমানুরের বিরুদ্ধে এবার ছাত্রনেতা হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিযোগপত্র

আমানুর রহমান খান
আমানুর রহমান খান

নিজ নির্বাচনী এলাকার ছাত্রলীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খানসহ (রানা) ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন। সাংসদ আমানুরের বিরুদ্ধে কারাগারে বসে ঘাটাইল জিবিজি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যা নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগপত্র জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আগামী ১৮ নভেম্বর মামলার ধার্য তারিখে আদালতে এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হবে।

অভিযোগপত্রে আরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হচ্ছেন অপু ঘোষ, আবু হানিফ, আতিকুর রহমান, খোরশেদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, বিদ্যুৎ সরকার, নাজিম, ইকবাল হোসেন, হায়দার, জুয়েল মিয়া, আজিজুল ইসলাম, সোনা মিয়া, খন্দকার আবদুর রউফ, মিল্টন হোসেন, রফিকুল হাসান, মো. রাসেল, মনছুর আলী, আবদুল জব্বার ওরফে বাবু, বুলবুল। আরেক আসামির বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাকে শিশু আদালতে বিচারের জন্য পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর রাতে জিবিজি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ রুবেলকে একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাঈদের হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের ৩৬টি কোপ দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন রুবেলের বাবা আতাব আলী বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে ঘাটাইল থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে ঘাটাইল থানা-পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পুলিশ এই মামলার আসামি আবদুল জব্বার ওরফে বাবু ও সেলিমকে গ্রেপ্তার করে। জব্বার ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর এবং সেলিম ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতেই এই ঘটনার সঙ্গে সাংসদ আমানুরের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।

জব্বার ও সেলিম জবানবন্দিতে জানান, ঘটনার মাসখানেক আগে তাঁরা কাশিমপুর কারাগারে থাকা আমানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় আমানুর আবু সাঈদ রুবেলকে কিছু করতে না পারায় তাঁদের ওপর (জব্বার ও সেলিম) ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তাঁরা ঘাটাইলে ফিরে এসে পরিকল্পনা করে হত্যার উদ্দেশ্যে রুবেলের ওপর হামলা চালান।
আবু সাঈদ রুবেল প্রথম আলোকে জানান, ওই হামলার পর তিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন। স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন না। অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এতে তাঁর বিচার পাওয়ার পথে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো।

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আবু সাঈদ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংসদ তাঁকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সাংসদ আমানুর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ২০১৪ সালের নভেম্বরে আত্মগোপনে চলে যান। পলাতক থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে তিনি জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। তার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।