সেতুর খুনে গ্রেপ্তার স্বামী এখন পুলিশ হেফাজতে

সেতু বর্মণ (১৯) আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে খুন করা হয়। ঘটনার এক বছর পর জানা গেল এ তথ্য। সেতুর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে, সেতুকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়। সেতুকে কেন খুন করা হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে।

সূত্রাপুর থানার পুলিশ বলেছে, বিয়ের ৪০ দিনের মাথায় সেতুর লাশ তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

সেতু খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ চন্দ্র মালোকে (৩০)। আজ শনিবার বিশ্বনাথকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সূত্রাপুর থানার পুলিশ।

গত বছরের ১১ আগস্ট গাজীপুরের মেয়ে সেতু বর্মণের লাশ উদ্ধার করা হয় সূত্রাপুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।

সম্প্রতি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, সেতুকে হত্যা করা হয়। গত রোববার সেতুর বাবা ক্ষিতীশ চন্দ্র বর্মণ বাদী হয়ে বিশ্বনাথকে আসামি করে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মঙ্গলবার সেতুর স্বামী বিশ্বনাথকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সেতু হত্যাকাণ্ডে বিশ্বনাথ জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর স্বামী বিশ্বনাথকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে।

সেতুর মৃত্যু-রহস্য

সেতুরা পাঁচ বোন। গাজীপুরের একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় বিশ্বনাথের সঙ্গে গত বছরের ১১ আগস্ট তাঁর বিয়ে হয়। সেতুর বাবা ক্ষিতীশ চন্দ্র এলাকায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালান।

সেতুর মৃত্যু প্রসঙ্গে ক্ষিতীশ প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন তিনি মাছ ধরছিলেন। রাত ১০টার দিকে সূত্রাপুর থেকে এক লোক ফোনে জানান, সেতু আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে সূত্রাপুরের বাসায় আসার পর সেতুর স্বামী বিশ্বনাথসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, সেতু অসুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সলিমুল্লাহ মেডিকেলের মর্গে গিয়ে মেয়ের লাশ তিনি দেখেন।

ক্ষিতীশ জানান, সেতু মারা যাওয়ার পর বিশ্বনাথের পরিবার তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। বিশ্বনাথ বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো যোগাযোগ করেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পান। এ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর জানতে পারেন, সেতু আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে খুন করা হয়। এখন খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছেন।

সেতুর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন-উর-রশীদ। তিনি আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুকে যে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, সেতুর শরীরে জখমের দাগ ছিল। গলায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির কোনো দাগ ছিল না। হারুন-উর-রশীদ জানান, সেতুর ঘর থেকে লাইলনের দড়ি ও ওড়না উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, সেতুর মৃত্যু-রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। বিশ্বনাথের পরিবার দাবি করছে, যে ঘর থেকে সেতুর লাশ উদ্ধার করা হয়, তা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। আসল ঘটনা কী, তা খুঁজে বের করা হবে।

শহীদুল জানান, সেতুর স্বামী বিশ্বনাথ দাবি করেছেন, বিয়ের পর থেকে সেতুর সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক যাচ্ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। সেতু যখন আত্মহত্যা করেন, তখন বিশ্বনাথ বাসায় ছিলেন না।

সেতুর বাবা ক্ষিতীশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, তিনি গরিব মানুষ। ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে তিনি বিয়ে দেন। মেয়েকে কেন খুন করা হলো, তা তিনি জানতে চান। সেতুর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান ক্ষিতীশ।