আশ্বাস দেওয়া হয়, চিঠি যায় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না

নির্মম হামলার শিকার ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক রাহাত করিম। গত ৫ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছে।  ফাইল ছবি
নির্মম হামলার শিকার ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক রাহাত করিম। গত ৫ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছে। ফাইল ছবি
>

*নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়
*হামলা করেন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
*হামলায় ১২ জন কর্তব্যরত সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন
*হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে
*মাথায় হেলমেট পরা, লাঠিধারী হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি

দায়িত্ব পালনের সময় রাস্তায় নির্মমভাবে পেটানো হয়েছিল সাংবাদিকদের। কিন্তু হামলাকারীদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনা হয়নি। সাংবাদিকদের চাপের মুখে প্রতিকারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। ঘটনার পর দুই মাস হতে চলল, কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় হামলা করেন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই হামলায় ১২ জন কর্তব্যরত সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এই হামলার ভিডিও এবং স্থিরচিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কিন্তু মাথায় হেলমেট পরা, লাঠিধারী হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি।

হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হস্তক্ষেপ চেয়ে গত ৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ওই চিঠির পর কী হলো, জানতে চেয়ে চলতি সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ও পুলিশ শাখায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এই দুই শাখার কর্মকর্তারা এ ধরনের কোনো চিঠি হাতে পাননি বলে প্রথম আলোকে জানান।

তথ্যমন্ত্রীর চিঠির পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তাই এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই ভালো বলতে পারবেন, আমার জানা নেই।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন পুলিশ এখনো মামলা করেনি, তা পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে হবে। তবে আমি আবারও আশ্বস্ত করতে চাই, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা নেব, সাংবাদিক নেতাদের কাছে দেওয়া কথা আমরা রাখব।’

চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আশ্বস্ত করা হয়েছিল, তারা ব্যবস্থা নেবে, কিন্তু নিল না। সাংবাদিকদের ওপর এভাবে হামলা করার পরও যদি বিচার না হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে।’ তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবার যোগাযোগ করবেন বলেও জানান।

গত দুই মাসে একাধিকবার এমন আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে যখনই সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো হামলাকারীদের বিচার চেয়ে সভা, মানববন্ধন করেছেন, তখনই এ ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

পুলিশ সদর দপ্তরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের কোনো বৈঠকে আলোচনা হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা হতাশা প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য সব ঘটনায় সরব থাকলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, দুঃখিত, ক্ষুব্ধ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিচারের দাবিতে ধর্মঘট করেছি, অনশন করেছি, মানববন্ধন করেছি। মন্ত্রীরা আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেননি। কিন্তু বিচার তাদের করতেই হবে। আমরা আবার কর্মসূচিতে যাব।’