প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার এই পরিপত্র জারি করা হয়।

শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর গতকাল বুধবারই নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। পরদিনই পরিপত্র জারি হলো। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল তা বাতিল হয়ে গেল।

পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি দপ্তর,স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ থেকে ১৩ তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের অবরোধ ও বিক্ষোভ চলার মধ্যেই এই পরিপত্র জারি করা হলো।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সরকারি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কমিটির একটি সুপারিশ অনুযায়ী, ভবিষ্যতে পর্যালোচনা করে যদি কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা অপরিহার্য হয়, তাহলে সরকার সেই ব্যবস্থা নিতে পারবে-এ বিষয়ে পরিপত্রে কিছু বলা হয়নি।

চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীদের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটা বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো কোটা চালু হয়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও আছে বিভিন্ন ধরনের কোটা। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা আগে মতোই থাকবে।

বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালে দুই দফায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এক পর্যায়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন। পরে ছাত্রলীগও আন্দোলনকারীদের মারধর করে। এরপর গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সচিবদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়।

সরকারের এই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কোটা বাতিলের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরে। এই কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।

প্রথম শ্রেণির চাকরি শুরু হয় নবম গ্রেড দিয়ে। এর ওপরের পদগুলো সাধারণত পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিগুলো ১০ গ্রেড থেকে ১৩ তম গ্রেডের মধ্যে। ব্যতিক্রম ছাড়া শুরুর পদেই নিয়োগ হয় এবং সেখানেই কোটা নির্ধারণ হয়। আগে চাকরি শ্রেণি ভিত্তিতে হলেও এখন গ্রেড ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।