রূপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ তিন লাশ: দুটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিন যুবকের মধ্যে দুজনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন চিকিৎসকেরা। তাতে বলা হয়েছে, তিনটি গুলি নিহত সোহাগ ভূঁইয়ার শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আরেকটি একটি গুলি তাঁর বাঁ পায়ের ঊরুতে পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ও শেখ ফরিদ রোববার দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন বরাবর ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চিকিৎসক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের মধ্যে নিহত সোহাগ ভূঁইয়া ও নূর হোসেন বাবুর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে দাখিল করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে শিমুল আজাদের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তাঁদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, গুলিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, নিহত সোহাগ ভূঁইয়ার শরীরে চারটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তিনটি গুলি শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেলেও একটি গুলি তাঁর বা পায়ের ঊরুতে পাওয়া গেছে। একটি গুলি তাঁর ঘাড়ের নিচে পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বের হয়ে গেছে, অপর একটি গুলি ডান হাতের ঊর্ধ্ব বাহুর নিচ দিয়ে ঢুকে বের হয়ে গেছে, ডান হাতের বুকের পেছন থেকে একটি গুলি ঢুকে বের হয়ে গেছে এবং বাঁ পায়ের ঊরুতে একটি গুলি বিদ্ধ হয়ে ছিল। অন্যদিকে নূর হোসেন বাবুর মাথায় একটি গুলি মাথায় ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে ও অপর একটি গুলি মাথার সামনে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলির ক্ষতের চিহ্ন একই ধরনের। খুব কাছ থেকে তিনজনকেই হালকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার রাতে কোনো এক সময় তাঁদের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ সেকান্দার আলী প্রথম আলোকে জানান, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা কাজ করছি।’

এদিকে ঘটনার ২৩ দিনেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। কারা, কেন, কী কারণে ওই তিন যুবককে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে, তা উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, ‘গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের মধ্যে একজনের শরীর থেকে একটি গুলি পাওয়া গেছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য তা সিআইডির কাছে পাঠানো হবে। তবে এই ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৯ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সেতুর নিচে সড়কে রাজধানীর মহাখালী ও মুগদা বাসাবো এলাকার তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ থেকে ফেরার পথে পাটুরিয়া ঘাট এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে তাঁদের তিনজনকে অন্য গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে নিখোঁজ থাকেন তাঁরা। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক শাফিউদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন।