বাস থেকে নামিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা!

সাজ্জাদ হোসেন ওরফে শাকিল
সাজ্জাদ হোসেন ওরফে শাকিল

কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতাকে হাতুড়িপেটা করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, একটি মামলায় সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগেরই আরেক পক্ষকে দায়ী করছে।

আজ সোমবার সকাল আটটায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পদুয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হামলার এই ঘটনা ঘটে। দুপুরের দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম সাজ্জাদ হোসেন ওরফে শাকিল (২২)। তিনি উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং একই ইউনিয়নের কুলাসার গ্রামের বতু মিয়ার ছেলে। সাজ্জাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিনের প্রাণনাশের আশঙ্কা মামলার সাক্ষী ছিলেন।

আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক হেলালসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর ভাতিজা আবদুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীদের দায়ী করেছেন। ইসমাইল হোসেন বাচ্চুও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে তাঁর ভাতিজার সাংগঠনিক কোনো পদ আছে কি না, তা জানা যায়নি।

গোলাম ফারুক হেলালসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত চারজন নেতা জানিয়েছেন, সাজ্জাদ ওই মামলার সাক্ষ্য দিতে সকাল আটটার দিকে বাসে করে ফেনী থেকে কুমিল্লার আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়া রাস্তার মাথায় আসামাত্র তাঁর ওপর হামলা হয়। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে ওত পেতে ছিল আলকরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর ভাতিজা আবদুর রহমানের নেতৃত্বে মো. আলম, আমির হোসেন, মো. শুভ, রিয়াজ উদ্দিন, কফিল উদ্দিন, বাহাদুর, ইকবাল হোসেনসহ অন্তত ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল। তাঁরা বাস থামিয়ে সাজ্জাদকে ধরে মাইক্রোবাসে করে কুলাসার দিঘির পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সাজ্জাদকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে দুপুরে দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

তবে আলকরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমি সকালে একটি মামলায় হাজিরা দিতে কুমিল্লায় চলে আসি। হাজিরা শেষে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করি। শুনেছি, ছাত্রলীগের এক ছেলেকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে। এই ঘটনায় আমার পরিবার ও আমাকে ফাঁসানোর জন্য স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে।’

নিহত ছাত্রের ফুফাতো ভাই বাহারউদ্দিন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুরুতর জখম করে। এতে তাঁর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। হামলার পর সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।’

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব অপি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকে যে বা যারাই হত্যা করুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা সাজ্জাদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে সাজ্জাদের পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল জানিয়েছেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে কাল মঙ্গলবার বিকেলে সাজ্জাদের মরদেহ দাফন করা হবে। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হত্যা মামলা করা হবে।