এসপির কর্মচারীরা পিটিয়েছেন বলে ওসির মামলা

>

• এসপি শামীমা ও তাঁর বাড়ির কর্মীদের সঙ্গে ওসির হাতাহাতি
• গত শুক্রবার রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলাটি দায়ের হয়
• ওসি আবদুর রশীদ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন
• মামলায় পুলিশ সুপারের নাম উল্লেখ করা হয়নি
• পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁরা সোমবার জামিন পান

এক পুলিশ সুপারের বাড়ির কর্মীদের মারধরে কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে বলে মামলা করেছেন রাজধানীর শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে ওই পুলিশ সুপার ও বাড়ির অন্য বাসিন্দারা বলছেন, ওসি রশীদ সাধারণ পোশাকে এসে বাড়ির এক কর্মীকে মারধর করেন, টেনে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে হাতাহাতি হয়।

এ ঘটনায় ওসি আবদুর রশীদ দুজনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। পুলিশ ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার তাঁরা আদালত থেকে জামিন পান। তবে মামলায় ওই পুলিশ সুপারের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমিন ও তাঁর বাড়ির কর্মীদের সঙ্গে ওসির হাতাহাতি হয়।

রমনা থানায় করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে গাড়িতে রাজারবাগ থেকে শিল্পাঞ্চল থানায় যাচ্ছিলেন আবদুর রশীদ। পথে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২ নম্বর ফটকের সামনে তাঁর বন্ধু মো. সালামের সঙ্গে দেখা হয়। ওসি সরকারি গাড়ি থেকে নেমে সালামের ব্যক্তিগত গাড়ির পাশে দাঁড়ান। সালাম তাঁকে চা পানের জন্য পীড়াপীড়ি করলে তিনি তাতে রাজি হন। গাড়ি রেখে সালাম পাশের দোকানে চা আনতে যান। এ সময় সেখানে এক নারীর সঙ্গে নাজমুল আলম (২১) ও মো. মিলন (৪০) নামে দুই ব্যক্তি কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া নামে একটি বহুতল ভবনসংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তা পরিষ্কার করছিলেন। তাঁরা দুজন এসে গাড়ির পাশে দাঁড়ানো ওসি রশীদকে গাড়ি সরাতে বলেন। জবাবে রশীদ বলেন, চালক চা আনতে গেছেন, এলেই গাড়িটি সরানো হবে। এ সময় তাঁরা আবদুর রশীদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু তাঁরা তা বিশ্বাস না করে সবার সামনে তাঁকে ভুয়া পুলিশ বলে ব্যঙ্গ করেন। এ সময় তিনি বন্ধু সালামকে ডেকে আনেন। সালাম গাড়িতে উঠে সেটি সরানোর সময় মিলন সালামের কলার চেপে ধরে মারতে মারতে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলেন। তখন তিনি বাধা দিতে গেলে ওসি রশীদকে কিল-ঘুষি মারা শুরু করেন নাজমুল। তাঁকে লাথি মেরে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়ে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন নাজমুল। তিনি দ্রুত মাথা সরিয়ে নিলে লাঠির আঘাত বাঁ কাঁধে লাগলে কাঁধের সংযোগস্থলের হাড় ভেঙে যায়। এরপর তাঁদের দুজনকে টেনেহিঁচড়ে পাশের বহুতল ভবনটির নিচতলায় নিয়ে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। তখন তাঁদের চিৎকারে ৫০-৬০ জন লোক জড়ো হয়ে তাঁদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এরপর রমনা থানায় খবর দেওয়া হলে থানার দুটি দল সেখানে গিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

তবে গতকাল বিকেলে কনকর্ড ম্যাগনোলিয়ায় গেলে সেখানকার লোকজন প্রথম আলোকে বলেন, ওই বাড়িটিতেই থাকেন পুলিশ সুপার শামীমা। শুক্রবার তিনিসহ বাড়ির কয়েকজন লোক আশপাশ পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় ওসি একটি দামি গাড়িতে করে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ান। এসি চালিয়ে তিনি গাড়ির ভেতরে বসে ছিলেন। তাঁকে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করায় তিনি শামীমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে তাঁর বাড়ির কেয়ারটেকার নাজমুলকে ধরে মারধর করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ তাঁদের কাছে আছে বলে দাবি করেন কনকর্ড ম্যাগনোলিয়ার কর্মী ও বাসিন্দারা।

যোগাযোগ করা হলে এসপি শামীমা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর মেয়ের ডেঙ্গু হয়েছে। এ কারণে শুক্রবার ছুটির দিনে বাড়ির দুই কর্মীকে নিয়ে আশপাশে পরিচ্ছন্ন করছিলেন। এ সময় একটি দামি কার রাস্তার পাশে দাঁড়ালে তাঁদের জায়গাটা পরিষ্কার করতে সমস্যা হচ্ছিল। গাড়ির ভেতরে বসে একজনকে মোবাইল টিপতে দেখা গেলে তাঁর একজন কর্মী কাচে টোকা দিয়ে গাড়িটি সরাতে বলেন। এ সময় গাড়ির ভেতরের লোকটি খেপে যান। শামীমা নিজে এগিয়ে এলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন ওসি। বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে লোকটি নিজেকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেন। কিন্তু তাঁর সাজপোশাক দেখে নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। একজন তাঁর পদবি জানতে চেয়ে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে আরও খেপে যান লোকটি। তিনি নাজমুলকে বেধড়ক মারধর শুরু করলে অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁকে রক্ষা করেন। পুরো বিষয়টিই সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়ে রয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোও হয়। এর মধ্যেই ওসি থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষেরই অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত চলছে।