ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

  • শুক্রবার ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৮ প্রকাশ
  • ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৬তম, গতবার ছিল ১৩৮তম
  • এবার ভারতের অবস্থান ১৩০তম, আর পাকিস্তান ১৫০তম
  • সামাজিক খাতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ওই দুটি দেশের চেয়ে বেশি। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, স্কুলে পাঠগ্রহণ—এসব খাতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু গড় আয় বাংলাদেশের অনেক কম।

গত শুক্রবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৮-এ এই চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম, গতবার ছিল ১৩৮তম। এবার ভারতের অবস্থান ১৩০তম, আর পাকিস্তান ১৫০তম। গতবারের চেয়ে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে গেলেও ভারত ও পাকিস্তান এক ধাপ পিছিয়েছে। ওই ১৮৯টি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গড় আয়সহ বিভিন্ন সূচকের ২০১৭ সালের পরিস্থিতি এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে গতবারের মতো এবারও নরওয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে।

ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক সেলিম জাহান এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ সামাজিক খাতে ভালো করেছে। এর কারণ, স্বল্প আয় দিয়ে অনেক সুন্দরভাবে সামাজিক খাতে খরচ করতে পারছে বাংলাদেশ। অল্প আয় দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কৌশলীভাবে দক্ষতার সঙ্গে খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক সূচকগুলোতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মানুষ ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের চেয়ে গড়ে বেশি দিন বাঁচে। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড়ে গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর। গড় আয়ু ভারতে ৬৮ দশমিক ৮ বছর ও পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৬ বছর। নবজাতক-মৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এক হাজার জীবিত শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ২ জন নবজাতক মারা যায়। ভারত ও পাকিস্তানে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ৬ এবং ৬৪ দশমিক ২। একইভাবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। বাংলাদেশে ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৩৪ দশমিক ২ জন মারা যায়। পাকিস্তানে তা দ্বিগুণের বেশি, ৭৮ দশমিক ৮ জন। আর ভারতে ৪৩ জন।

সন্তান প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যু হারে অবশ্য তিন দেশই কাছাকাছি অবস্থানে। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে পিছিয়ে, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ গর্ভবতী মায়ের মধ্যে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গড়ে ১৭৬ জন মারা যান। ভারত ও পাকিস্তানে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১৭৪ ও ১৭৮।

বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার অবশ্য এখন ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। ভারতে তা ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ ও পাকিস্তানে ৫৭ শতাংশ। অথচ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে ওই দুটি দেশের চেয়ে কম খরচ করে।

নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়ে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বেশি। বাংলাদেশে সংসদে যত আসন আছে, এর মধ্যে ২০ দশমিক ৩ শতাংশই নারী প্রতিনিধি। পাকিস্তানে তা ২০ শতাংশ এবং ভারতে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে মাথাপিছু আয়ে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে (পিপিপি হিসাবে) বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় এখন ৩ হাজার ৬৭৭ ডলার। ভারতের প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি, ৬ হাজার ৩৫৩ ডলার। আর পাকিস্তানে ৫ হাজার ৩১১ ডলার।

এই বিষয়ে সেলিম জাহান আরও বলেন, যদি আয় বাদ দিয়ে শুধু সামাজিক সূচক দিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হতো, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ৯ ধাপ এগোত। অন্যদিকে ভারত আরও ৫ ধাপ ও পাকিস্তান ১৫ ধাপ পিছিয়ে যেত।

সার্বিকভাবে অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা দুর্বল। আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে। শীর্ষস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা (৭৬তম)। এ ছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা অন্য দেশগুলো হলো মালদ্বীপ (১০১তম), ভারত (১৩০তম) ও ভুটান (১৩৪তম)। বাংলাদেশের পেছনে আছে নেপাল (১৪৯তম), পাকিস্তান (১৫০তম) ও আফগানিস্তান (১৬৮তম)।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছেন। পুরুষেরা নারীদের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি আয় করতে পারেন। নারীদের মাথাপিছু গড় আয় (পিপিপি অনুসারে) মাত্র ২ হাজার ৪১ ডলার। আর পুরুষের গড় আয় ৫ হাজার ২৮৫ ডলার। অন্যদিকে নারীরা শিক্ষার সুযোগও কম পান। নারীরা গড়ে ৫ দশমিক ২ বছর পড়াশোনা করতে পারেন, পুরুষেরা গড়ে ৬ বছর বছর পড়াশোনা করেন। তবে বাংলাদেশের পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি দিন বাঁচেন। পুরুষেরা গড়ে ৭১ দশমিক ২ বছর বাঁচেন, নারীরা বাঁচেন ৭৪ দশমিক ৬ বছর।

ইউএনডিপির ওই প্রতিবেদনে মানব নিরাপত্তার বিষয়টিও উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি ১০ লাখ লোকের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ১৩১ জন বাস্তুচ্যুত হন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৩২ হাজার। সার্বিকভাবে দেশের প্রায় ২৩ লাখ এতিম শিশু আছে।