ফেরি থেকে নদীতে পড়ে গেল শিশু

সন্তান হারানোর শোকে ফেরিঘাটে মা-বাবার আহাজারি। ছবি: এম রাশেদুল হক
সন্তান হারানোর শোকে ফেরিঘাটে মা-বাবার আহাজারি। ছবি: এম রাশেদুল হক

রাতে ফেরিতে মা শৌচাগারের দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে যান। বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাড়ে চার বছরের শিশুটি হঠাৎ ফেরিতে থাকা বাসের ব্রেক করার শব্দে চমকে ভয়ে দৌড় দিয়ে ফেরি থেকে নদীতে পড়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। এখন পর্যন্ত শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ফেরিটি তখন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে পেছনের ডালা নামানো ছিল, কিন্তু পন্টুন থেকে সরে এসেছিল। শিশুটি ভয়ে দৌড় দেওয়ার সময় অন্ধকারে ঠাওরাতে না পেরে পন্টুন ও ফেরির ফাঁকা স্থান দিয়ে নদীতে পড়ে যায়। শিশুটিকে কেউ পড়ে যেতে না দেখলেও তার দৌড়ে যাওয়া ও পানিতে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেয়েছেন কয়েকজন।

শিশুটির নাম রুকাইয়া। তার বাবার নাম সেলিম রেজা ও মায়ের নাম জেসমিন আক্তার। সেলিম রেজা পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা শহরে। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে রুকাইয়া ছিল ছোট। বড় মেয়ের বয়স ছয় বছর।

পরিবার ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির মা জেসমিন আক্তারের ছোট ভাইয়ের অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে তাঁরা মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। রাতে দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাটে তাঁদের গাড়িটি রজনীগন্ধা নামক একটি ফেরিতে ওঠে। মা জেসমিন এ সময় রুকাইয়াকে নিয়ে শৌচাগারের দিকে যান। মেয়েকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি ভেতরে ঢোকেন। পরে বেরিয়ে এসে তিনি রুকাইয়াকে না দেখতে পেয়ে মেয়ের খোঁজে চিৎকার করতে থাকেন। শিশুটির বাবাও খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তখন কয়েকজন জানান, ফেরিতে ওই সময় একটি এসি বাস উঠে সশব্দে ব্রেক করলে আওয়াজে ভয় পেয়ে যায় শিশুটি। সে পেছনের দিকে দৌড় দেয়, সঙ্গে সঙ্গে পানিতে কিছু পড়ে যাওয়ার বড় ধরনের শব্দ হয়। ওই লোকজনের দেওয়ার তথ্য অনুসারে পরিবারটি অনুমান করে শিশুটি নদীতে পড়ে গেছে।

শিশুর খোঁজে নদীতে ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরি দলের তৎপরতা। ছবি: এম রাশেদুল হক
শিশুর খোঁজে নদীতে ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরি দলের তৎপরতা। ছবি: এম রাশেদুল হক

আজ মঙ্গলবার সকাল আটটায় ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির বাবা-মা আহাজারি করছেন। শৈলকুপা থেকে সেখানে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে অন্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকায় চলে গেছে। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী সন্তানের খোঁজে ঘাটে থেকে গেছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। মানিকগঞ্জ থেকে ডুবুরি এসে পানিতে নেমেছেন। তবে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।


শিশুটির মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতে ঘটনা ঘটলেও ফায়ার সার্ভিস এসেছে সকাল আটটা। তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে গিয়ে কত কান্নাকাটি করেছি, আমার মেয়েকে খুঁজে দেওয়ার জন্য। তারা এত দেরিতে এসেছে!’


ফায়ার সার্ভিসের সাব–অফিসার বিল্লাল হোসেন খলিফা তিনি দাবি করেছেন, ফেরি থেকে নদীতে শিশু পড়ে যাওয়ার খবরটি তাঁরা ভোরে জানতে পেরেছেন। খবর পেয়েই তাঁরা এসে কাজ শুরু করেছেন।