তৎপর আ.লীগ, বিএনপিতে বিভক্তি

দলে বড় ধরনের বিরোধ না থাকলেও নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে মনোনয়নের আশায় জোর প্রচারণায় নেমেছেন বর্তমান সাংসদসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। গণসংযোগের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতেও আলোচনায় রয়েছেন একাধিক নেতা। তবে কোন্দলের কারণে দলে রয়েছে সাংগঠনিক সংকট।

নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৫ আসন। বর্তমানে মোট ভোটার ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৫২ জন।

১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এই আসনে সাংসদ হন বিএনপির প্রার্থী শামসুল ইসলাম। ২০০১ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত আব্দুল জলিল। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ খানকে পরাজিত করে আবারও সাংসদ হন। ২০১৩ সালের মার্চে জলিলের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক। উপনির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো সাংসদ হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে আবারও সাংসদ হন।

মালেকের গোছানো মাঠ
এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আবদুল মালেক জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতিও। তাঁর নেতৃত্বে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সব শাখা ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনের ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মিসভা, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী আবদুল মালেক। তাঁর সময়ে নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো বিরোধ নেই।

আবদুল মালেক ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়নের আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল ও নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষান।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক বলেন, আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর আবদুল মালেকের নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে এখানে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত। সবকিছু ঠিক থাকলেও আগামী নির্বাচনেও তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন এবং এখানকার মানুষ তাঁকে আরও একবার নির্বাচিত করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে।



আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মালেকের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জলিল। দলের সাংগঠনিক কাজে তেমন তৎপরতা দেখা না গেলেও নির্বাচনের আগে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গণসংযোগের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তরুণ এই নেতা। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে প্রচারণা শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছেন নিজাম। বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রে জোর লবিং চালাচ্ছেন তিনি। সাংগঠনিক কাজে তেমন সক্রিয় না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক দেখাতে পারেন তিনি।

নিজাম উদ্দিন জলিল বলেন, তিনি নওগাঁ সদরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ বিষয়ে কেন্দ্রের সমর্থন আছে। তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ ভোটারদের মাঝে আমার আব্বার জন্য সফট কর্নার আছে। বাবার যে শূন্যতা নওগাঁয় সৃষ্টি হয়েছে, তা তো পূরণ সম্ভব নয়। তবে তাঁর সন্তান হিসেবে আমি যদি কোনো সুযোগ পাই, তবে নিশ্চয়ই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকব।’

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ মোটর শোভাযাত্রা, গণসংযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল মালেক সাত বছর তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া নওগাঁয় লাগে না। এ ছাড়া তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী সাংসদের প্রতি নাখোশ। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের একজন কর্মী হিসেবে আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দিতে চাই।’

বিএনপিতে চারজন
সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় অন্তত চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ খান, দলের জেলা শাখার সভাপতি ও নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা বিএনপিতে চরম কোন্দল রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের ভেতর গ্রুপিং অনেকটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়নি। কেন্দ্রের করে দেওয়া ৩০ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কাজ।

নজমুল হক বলেন, তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে কেন্দ্র যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর হয়েই কাজ করবেন। সাংগঠনিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বড় দলে একটু সমস্যা তো থাকবেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই হয়ে যাবে।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গিয়েছিলেন আবদুল লতিফ খান। তিনি এখনো মাঠে সক্রিয়। লতিফ খান বলেন, এটা তাঁর সাজানো আসন। দলের হাই কমান্ড তাঁকেই মনোনয়ন দেবে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের সবুজ সংকেত পেয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। আমিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হব।’

আগামী পর্ব নেত্রকোনা–৩ আসন নিয়ে