হত্যার নির্দেশ আসে সুইডেন থেকে

নিহত সিদ্দিক মুন্সি
নিহত সিদ্দিক মুন্সি

সুইডেনে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশি এক সন্ত্রাসী জাহিদুল ইসলাম ওরফে নাহিদের নির্দেশে বনানীর একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক হোসাইন মুন্সিকে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, চাঁদার জন্য ছাত্রদল ও যুবলীগের কিছু নেতা বনানীতে রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ওই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেন।

তবে এক বছরেও আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে সন্দিহান সিদ্দিক মুন্সির পরিবার। সিদ্দিক মুন্সির রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায় যুক্ত থাকা তাঁর জামাতা আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার কারণ নিয়ে তাঁরা একরকম অন্ধকারে আছেন। চাঁদার জন্য তাঁর শ্বশুরকে খুন করা হয়েছে বলা হলেও হামলাকারীরা ক্যাশবাক্স থেকে কোনো টাকা নেয়নি। সেদিন ক্যাশবাক্সে তিন লাখ টাকা ছিল।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাতে কয়েকজন মুখোশধারী যুবক বনানীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এস মুন্সি ওভারসিজে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক মুন্সি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারীও আহত হয়েছিলেন সেদিন। এ ঘটনায় সিদ্দিক মুন্সির স্ত্রী জোসনা বেগমের দায়ের করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির উত্তর বিভাগ। মামলায় অজ্ঞাতনামা চার দুষ্কৃতকারীর নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির সূত্র জানায়, রাস্তা থেকে জব্দ করা সিসি ক্যামেরায় ডিবি পুলিশ দেখতে পায়, ঘটনার পর এস মুন্সি ওভারসিজ থেকে চার যুবক বেরিয়ে আসছেন। তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই চার যুবক নুরুল ইসলাম ওরফে নুরী, পিচ্চি আল আমিন, সাদ্দাম, শরফউদ্দিন ওরফে শরিফ সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁরা ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তাঁরা পেশাদার খুনি হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া ওই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন হেলালউদ্দিন, জাকির হোসেন, আরিফ হোসেন, মো. নূর আমিন ওরফে নুরা ও ইয়াসিন।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানায়, জাহিদুল ইসলাম ওরফে নাহিদ নামের এক ব্যক্তি সুইডেন থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সিকে হত্যার নির্দেশ দেন। তিনি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। জাহিদুল ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র আইনসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ২০১৩ সালে সুইডেনে পালিয়ে যান। সেখান থেকে চাঁদার জন্য সিদ্দিক মুন্সিকে হত্যা করার দায়িত্ব দেন তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা হেলাল উদ্দিনকে। হেলাল বাড্ডার জাকির হোসেনের সহায়তা চান। জাকির খুনি ভাড়া করার দায়িত্ব নেন। নুরুল ইসলাম ওরফে নুরীকে ভাড়া করেন তিনি। পরে নুরুল তাঁর সহযোগী পিচ্চি আল আমিন, সাদ্দাম, নুর আমিন ওরফে নুরা, আরিফ ও শরফউদ্দিনকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করে সিদ্দিক মুন্সি হত্যার দিনক্ষণ ও সময় ঠিক করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিদ্দিক মুন্সি হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া হেলাল উদ্দিন, জাকির হোসেন, আরিফ হোসেন, নুর আমিন ও ইয়াসিন কারাগারে আছেন। জাকির ও ইয়াসিন ছাড়া বাকি তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় সুইডেনে অবস্থানরত জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ইয়াসিন ও ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত চারজনকে অব্যাহতির জন্য আদালতে সুপারিশ করা হচ্ছে।

মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসীরা চাঁদার জন্য সিদ্দিক মুন্সিকে ভয় দেখাতে গিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে।