নিমতলীর দেউড়ি এখন জাদুঘর

নতুন রূপে নিমতলীর দেউড়ি। এখন এশিয়াটিক সোসাইটির ঐতিহ্য জাদুঘর।  ছবি: হাসান রাজা
নতুন রূপে নিমতলীর দেউড়ি। এখন এশিয়াটিক সোসাইটির ঐতিহ্য জাদুঘর। ছবি: হাসান রাজা

ইতিহাসের পাতায় আর লোকমুখে এখনো আছে নিমতলী প্রাসাদ। তবে বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। কেবল ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বারটি টিকে আছে, যার নাম ‘নিমতলীর দেউড়ি’। এখন এটি এশিয়াটিক সোসাইটির ঐতিহ্য জাদুঘর। দেশের জাদুঘরের তালিকায় এটি নতুন সংযোজন।

দূর থেকে মনে হবে মাঝারি আকৃতির সুরম্য ভবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলের পাশেই বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যালয়। মূল ভবন ফেলে ভেতরের প্রাঙ্গণে নিমতলীর দেউড়ি। তিন তলার সমান উঁচু। মাঝখানে প্রবেশপথটি দুই তলার সমান। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের উদ্বোধনে ১১ অক্টোবর ঐতিহ্য জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শিগগির দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া হবে এটি।

পুরোনো ভবনটি (প্রবেশদ্বার) অনেকবার দেখেছি। নতুন করে যাত্রা শুরুর পর দেখে একটু অবাকই লেগেছে। মূল কাঠামো রেখে বেশ খানিকটা বদলে গেছে। পুরোনো স্থাপনার চমৎকার নতুন উপস্থাপনের বিস্ময় নিয়েই ঢুকে যাই ভেতরে। নতুন রঙের গন্ধ নাকে লাগছিল। নিচতলায় ডান দিকে পাশাপাশি দুটি ঘর। এই ভবনেই ছিল এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম অফিস। নিচতলায় তাই রাখা হচ্ছে এশিয়াটিক সোসাইটির নানান স্মারক। দোতলায় একটি কামরা, তাতে বেশ কটি আলোকচিত্র ও তৈলচিত্র।

জাদুঘরের ভেতরে নায়েবের দরবার
জাদুঘরের ভেতরে নায়েবের দরবার

তিনতলায় জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কামরাটি। ৪৫ ফুট লম্বা এই কামরায় রাখা হয়েছে মসলিন, ধাতব মুদ্রা ও তৈজসপত্র। সুপরিসর ঘরটিতে সাজানো হয়েছে নায়েব নাজিমের দরবার। হঠাৎ দেখে মনে হবে দরবারে বসে আছেন নায়েব, হুঁকা হাতে। পেছনে একজন কাপড়ের পাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছেন। ভবন ঘুরে দর্শনার্থীরা নবাবি আমলে ফিরে যেতে পারেন।

সতেরো থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের স্মারক দেখা গেল জাদুঘরে। জাদুঘরের কিউরেটর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ৮০টি স্মারক পাওয়া গেছে। তবে একটা আফসোস রয়ে গেছে। এই ভবনের সঙ্গে যুক্ত কোনো স্মারক এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ভবনটা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা কিনেছেন, তাঁরা প্রায় সবকিছুই নিয়ে গেছেন। তাঁদের কেউ আর এ দেশে নেই। তবে এই ভবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু উপকরণ জাতীয় জাদুঘর ও আহসান মঞ্জিলে আছে। সেখান থেকে ধার এনে কিছুদিন রাখার চিন্তা আছে।

জাদুঘরের প্রধান সমন্বয়ক শরীফ উদ্দিন আহমদ জানালেন, সংস্কার করে জাদুঘরটি সাজাতে প্রায় আড়াই বছর লেগেছে। মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেবে এই জাদুঘর।