চুড়িই ধরিয়ে দিল 'খুনিকে'

স্বামীর সন্দেহ, স্ত্রী প্রায়ই মুঠোফোনে কারও সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধে৵ দেড় বছর ধরে ঝগড়া হতো। এরপরও সুরাহা হয়নি। স্বামীর সন্দেহ, স্ত্রী কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছেন। পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে খুন করেন তিনি। এরপর শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন মাথা। মাথাটি ফেলা হয় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার একটি ঝোপে। আর মস্তকবিহীন লাশটি বস্তাবন্দী করে ফেলা হয় হালিশহরের একটি নালায়।

সূত্রবিহীন বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এসব তথ্য পায়। হালিশহর এলাকার নিখোঁজ এক নারীর তথ্য জানতে তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। স্বামীর মুঠোফোনে থাকা এক নারীর হাতে চুড়িসহ ছবি রয়েছে। সেই চুড়ির সঙ্গে মিলে যায় মস্তকবিহীন নারীর লাশের হাতের চুড়ি।

ঘটনার তিন দিন পর নিহত নারীর স্বামী জাহিদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর ক্লুবিহীন এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়। পুলিশ জানায়, হাতের চুড়িই ধরিয়ে দেয় খুনিকে।

শুক্রবার হালিশহর থানার আগ্রাবাদ ছোটপুল এলাকায় নালার ভেতর থেকে বস্তাবন্দী মস্তকবিহীন অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মাথাটি পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় হত্যা মামলা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিহত নারীর স্বামী জাহিদকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জানান, দেড় বছর আগে পেশায় কাঠমিস্ত্রি জাহিদের সঙ্গে সুমি ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মুঠোফোনে কথা বলা নিয়ে দুজনের মধে৵ দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। জাহিদের সন্দেহ, তাঁর স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর প্রতিবেশী আবদুল জলিল ও ফেরদৌসি বেগমের সঙ্গে আলাপ করেন। তাঁরা পরামর্শ দেন স্ত্রীকে মেরে ফেলতে।

হালিশহর থানার ওসি এস এম ওবায়দুল হক জানান, জাহিদ বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে মারধর করেন। একপর্যায়ে গলা টিপে শ্বাসরোধে খুন করেন। পা চেপে ধরেন ফেরদৌসি। মৃত্যুর পর জলিল লাশ গুম করতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দেন জাহিদকে। জলিল ও জাহিদ মিলে সুমির মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। ঘটনার দিন রাতে তাঁরা পলিথিনে মুড়িয়ে বাজারের ব্যাগে করে মাথাটি ডবলমুরিং থানার ব্যাপারীপাড়ার পইট্টা দিঘির পাড়ে কবরস্থানে ঝোপের মধে৵ ফেলে আসেন। আর ভোরে লাশটি সিমেন্টের বস্তার ভেতর করে হালিশহর ছোটপুল এলাকায় ফেলে আসেন।

নগর পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম বলেন, মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় বের করা নিয়ে বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। আশপাশের এলাকায় কোনো নারী নিখোঁজ আছেন কি না, খোঁজ করতে থাকে। রোববার হালিশহর থানার পুলিশ জানতে পারে, ছোটপুল এলাকায় সুমি নামে এক নারী নিখোঁজ রয়েছেন। কারণ জানতে তাঁর স্বামী জাহিদকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁর মুঠোফোনে একটি নারীর ছবি পাওয়া যায়। সেখানে নারীর হাতে থাকা চুড়ির সঙ্গে মস্তকবিহীন নারীর হাতের চুড়ির মিল পাওয়া যায়। পরে জাহিদ স্বীকার করেন, মস্তকবিহীন লাশটি তাঁর স্ত্রীর।

পুলিশ জানায়, স্বীকার করার পর জাহিদকে নিয়ে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। জলিল ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জাহিদকে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে তিনি খুনের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।