কমনওয়েলথ হেলথ মেডিসিন অ্যাওয়ার্ড পেল টেলিমেডিসিন-বাংলাদেশ

১২ অক্টোবর কলম্বোতে টেলিমেডিসিন-বাংলাদেশের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করছেন খোন্দকার সিদ্দিকি-ই রব্বানী। ছবি: সংগৃহীত
১২ অক্টোবর কলম্বোতে টেলিমেডিসিন-বাংলাদেশের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করছেন খোন্দকার সিদ্দিকি-ই রব্বানী। ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত তৃতীয় কমনওয়েলথ ডিজিটাল হেলথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮–এর ‘টেলিমেডিসিন’ বিভাগে বাংলাদেশের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম’ ‘বিজয়ী’ বা ‘উইনার’ পুরস্কার লাভ করেছে। ৬টি বিভাগে ৪০টির বেশি দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। টেলিমেডিসিনে ফাইনালিস্ট হিসেবে এসেছিল সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের দুটিসহ মোট ৬টি প্রকল্প। গত ১২ অক্টোবর কলম্বো শহরের সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে আয়োজিত সাড়ম্বর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল অনন্য। কারণ, একই বিভাগে ‘রানার্সআপ’ পুরস্কারটিও ছিল বাংলাদেশের, টেলিনর-গ্রামীণফোনের ‘টনিক’ প্রকল্প এটি লাভ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী ২০১১ সাল থেকে একঝাঁক উদ্যমী তরুণ গবেষককে নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্বভাবে টেলিমেডিসিনের প্রযুক্তি উন্নয়ন করে নিজেদের প্রচেষ্টাতেই তা সারা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার খুবই কম। তাই শহরে বাস করা ডাক্তারদের চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার জন্য টেলিমেডিসিনই একমাত্র সমাধান হতে পারে। আর সেটি হতে হবে এ দেশের মানুষের আর্থিক সংগতি, শিক্ষা ও মন-মানসিকতাকে সামনে রেখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করা প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো সফটওয়্যারের সঙ্গে কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও উন্নয়ন করে এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন রোগীর শরীরের তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে দূরের ডাক্তারের কাছে চলে যেতে পারে। ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি টেলি-স্টেথিসকোপ এবং টেলি-ইসিজি যন্ত্র চালু করা হয়েছে। গ্রামের উদ্যোক্তা ও ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজনকে সামনে রেখে সফটওয়্যারটি করা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা মিলিয়ে। গোটা পদ্ধতি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন কম্পিউটারে প্রশিক্ষিত একজন ব্যক্তি মাত্র কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ শেষে নিজ গ্রামে টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র স্থাপন করতে পারেন। আর ডাক্তাররাও যাঁর যাঁর সুবিধামতো জায়গা থেকে, এমনকি গাড়িতে চলার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেও চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন।

পুরস্কার হাতে অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকি-ই রব্বানী ও তাঁর তিন সহযোগী। সবার বাঁয়ে মো. আবু ইউসুফ, বাঁ থেকে তৃতীয় ড. জিয়াদ তরফদার ও ড. আবদুল্লাহ আল আমিন। ছবি: সংগৃহীত
পুরস্কার হাতে অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকি-ই রব্বানী ও তাঁর তিন সহযোগী। সবার বাঁয়ে মো. আবু ইউসুফ, বাঁ থেকে তৃতীয় ড. জিয়াদ তরফদার ও ড. আবদুল্লাহ আল আমিন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রমে বর্তমানে ৩০টিরও বেশি গ্রামীণ সেবাকেন্দ্র চালু রয়েছে এবং এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইদানীং সিআরপি, ব্র্যাকসহ কয়েকটি এনজিও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসাসেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রকল্পে যোগ দিয়েছে। সারা বিশ্বের, বিশেষ করে বঞ্চিত মানবগোষ্ঠীর কল্যাণে এ দল তাদের কোনো উদ্ভাবনের পেটেন্ট না করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য স্বল্প আয়ের দেশেও এ সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দল পরিকল্পনা করছে।

ন্যূনতম আর্থিক সংস্থান নিয়ে অধ্যাপক রব্বানীর দলের এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সীমিত আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফার্ম ফ্রেশ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই (বর্তমানে আইসিটি ডিভিশনে অন্তর্ভুক্ত), বেক্সিমকো ফার্মা, আইএসআইএফ (অস্ট্রেলিয়া), ইএমকে সেন্টার (ঢাকা) এবং কয়েকজন দাতা ব্যক্তি। বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগকে দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অর্থায়ন এবং সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফান্ড থেকেও এ গবেষণায় আংশিক সাহায্য এসেছে। এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া ও এর বাধাগুলোকে দূর করার জন্য এটুআইয়ের চলমান সহযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পটি পেয়েছে ব্র্যাক-মন্থন-২০১৬ ‘উইনার’ পুরস্কার, মন্থন-দক্ষিণ এশিয়া-২০১৬–এ ‘ফাইনালিস্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি এবং জেনেভাতে ডব্লিউএসআইএস-২০১৭–তে চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার (এটুআইয়ের মাধ্যমে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ বছরের ইতিহাসে এই বোধ হয় প্রথম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন করা প্রযুক্তি এত বড়ভাবে দেশের সাধারণ মানুষের সরাসরি উপকারে লেগেছে। বিজ্ঞপ্তি।