বংশের এই বাতি যেন জ্বলে থাকে!

>

*গত শুক্রবার আশুলিয়ায় গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ ঘটে
*আশুলিয়ায় দগ্ধ হয়ে মারা যান পরিবারের তিনজন
*অক্টোবরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ রোগী ছিল ৩০৭ জন
*গত এক সপ্তাহে ভর্তি রোগীর মধ্যে মারা গেছে চারজন

গ্যাসের আগুনে দগ্ধ দেড় বছর বয়সী মেয়ে আয়শা ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। মা রিপা আক্তার নিজেও দগ্ধ। রান্নাঘরের গ্যাস বিস্ফোরণে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে হারিয়েছেন তিনি। ২০ বছর বয়সী এই নারীর আকুতি, স্বামীর বংশের একমাত্র বাতি তাঁদের মেয়েটা যেন বেঁচে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে শুধু গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হওয়া রোগী ছিল ৩০৭ জন। গত এক সপ্তাহে ভর্তি রোগীর মধ্যে মারা গেছে চারজন। আটজনের অবস্থা গুরুতর।

রিপার বাড়ি আশুলিয়ায়। আইসিইউর বাইরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, গত শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে বিকট শব্দে গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর থেকে আগুন পুরো দোতলা বাসায় ছড়িয়ে যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পরিবারের তিনজন। এ ঘটনার মাত্র ১৫ দিন আগে রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লাগে। তখন বাড়িওয়ালা মিস্ত্রি নিয়ে এসে গ্যাসের লাইনের কয়েকটি জায়গায় লাল স্কচটেপ লাগিয়ে চলে যান। শুক্রবারের ঘটনার পর বাড়িওয়ালা একবারও খোঁজ নেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিপা।

অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে অগ্নিদগ্ধ শিশু আয়েশা। শিয়রে মা রিপা আক্তার। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে।  ছবি: প্রথম আলো
অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে অগ্নিদগ্ধ শিশু আয়েশা। শিয়রে মা রিপা আক্তার। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। ছবি: প্রথম আলো

গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ভর্তি চারটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। গত সোমবার দোহারের নবাবগঞ্জ থেকে মা শাহানা বেগম ও ৪০ বছর বয়সী ছেলে নজরুল হাসান বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। মায়ের ১২ শতাংশ ও নজরুলের শরীরের ৮২ শতাংশ পুড়েছে। মা গ্রিন ইউনিটে আর ছেলে আইসিইউতে ভর্তি। তাঁদের পরিবারে রান্নায় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। চুলা জ্বালাতে গিয়ে বিস্ফোরণে মা দগ্ধ হন। আর মাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলে দগ্ধ হন।

গত মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরে দগ্ধ হন এক দম্পতি। এ ঘটনায় স্বামী মারা গেছেন। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর রাজধানী উত্তরখানে একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলার আগুনে ফ্ল্যাটের তিন পরিবারের আটজন দগ্ধ হন, পরে মারা যান পাঁচজন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে ৪০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। কয়েক মাস ধরে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনার সংখ্যা এবং রোগীদের যে ভয়াবহ অবস্থা দেখছি, তা আগে কখনো দেখিনি। সময় এসেছে গ্যাস সরবরাহকারী এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা। আর গ্যাস ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’