ঝিনাইদহে মনোনয়নপ্রত্যাশী যাঁরা

ঝিনাইদহে রয়েছে চারটি আসন। যেসব আসনে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এই চার আসনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতা তুলনামূলক কম। জাতীয় পার্টিসহ অন্যরাও মাঠে ঠিকমতো নামেনি। তবে বেশ কয়েক জন ছোট ছোট দল থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে নাম শোনা যাচ্ছে।



ঝিনাইদহ-১

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-১ (জাতীয় সংসদের ৮১ নম্বর) আসন। নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। এই আসনে সরকারি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত কামরুজ্জামানের কন্যা ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, শৈলকুপার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, পিয়াংকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের (আসাফো) সভাপতি সাইদুর রহমান সজল ও বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলাল। তবে এই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই আবারও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অবশ্য ক্ষমতায় থাকাকালীন কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছেন। ফলে অন্যরা যে খুব বেশি পিছিয়ে আছেন, তা বলা কঠিন।

এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলে থাকা এ আসনটি ২০০১ সালের নির্বাচনে হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপর থেকে আসনটি দখলে নিতে পারেনি বিএনপি। এই আসনে বিএনপি থেকে তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। এঁরা হলেন বিএনপির একটি অংশ উপজেলা শাখার সভাপতি সাবেক সাংসদ আবদুল ওহাব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। এ ছাড়া এই আসনে শৈলকুপা উপজেলা জাতীয় পাটির (এরশাদ) সভাপতি, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিকা আলম গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।


ঝিনাইদহ- ২

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩টি, হরিণাকুন্ডু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ (জাতীয় সংসদের ৮২) আসন। জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন চারজন। এঁরা হলেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সাংসদ সফিকুল ইসলাম অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত ও সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী বর্তমান সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।

এই আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় বিএনপির চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এঁরা হলেন চারবার নির্বাচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মজিদ ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু। এই আসনটিতে বরাবরই বিএনপির রয়েছে বেশ শক্ত অবস্থান। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে সব সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে।

আসনটিতে জামায়াতসহ কোনো ইসলামি ও বাম দলের নির্বাচনী তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এই আসনে বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে আসছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।


ঝিনাইদহ-৩

কোটচাঁদপুর উপজেলার পাঁচটি, মহেশপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৩ (জাতীয় সংসদের ৮৩) আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৫৮ জন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। আর বিএনপির রয়েছে হাফ ডজন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, সাবেক সাংসদ শফিকুল আজম খান চঞ্চল, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি, প্রীতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পারভিন তালুকদার মায়া, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করিম টিটোন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মোহম্মদ আলী, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা কামরুজ্জামান প্রিন্স, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এম এম জামান মিল্লাত ও আজিবর রহমান মোহন।

এই আসন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ছয়জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন মহেশপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহসম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহফুজুল হক খাঁন বাবু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বর্তমান কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ব্যারিস্টার লতিফুর রহমান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান মোমিন।

আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াত ইসলামের প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছেন। জেলার অন্য কোনো আসনে জামায়াতের কোনো প্রার্থীর প্রচারণা না থাকলেও কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে একাধিক স্থানে অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের দোয়া চাওয়া প্রচারপত্র রয়েছে। ফলে এই আসনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ভীত খুব একটা শক্ত নয়। তবে মহেশপুর উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি সাংবাদিক আব্দুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান স্বাধীন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি নিজেদের দখলে রাখার জন্য লড়বে। অপর দিকে বিএনপি লড়বে আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য।


ঝিনাইদহ-৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি, সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ (জাতীয় সংসদের ৮৪) আসন। এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ছয়জন। এঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের।

অপর দিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন-বিএনপি সাবেক সাংসদ শহীদুজ্জামান বেল্টু, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক অংশের আহ্বায়ক পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবার রহমান, যুগ্মআহবায়ক হামিদুর রহমান হামিদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হারুন অর রশিদ মোল্লা।

এই আসনে জাতীয় পাটি, জামায়াতসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো প্রচারণা নেই। আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে আসছে। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।