আলোচনায় মনজুর আলম

মনজুর আলম
মনজুর আলম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র হয়েছিলেন। এ কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাঁকে নিয়ে আলোচনায় সরব।

গত শনিবার ঢাকার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মোহাম্মদ মনজুর আলম। গতকাল রোববার সেই ফরম পূরণ করে আবার জমা দেওয়া হয়। তিনি চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তিনি তাঁর ‘গুরু’ আওয়ামী লীগের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে আলোচনায় এসেছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার অনেক পরে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবার বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হন। একপর্যায়ে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম।

সিটি নির্বাচন বর্জনের পর মনজুর আলমকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলম। এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন।

গত বছরের ডিসেম্বরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মনজুর আলমও নীরব হয়ে পড়েন। গত শনিবার আওয়ামী লীগের ফরম কেনার পর চট্টগ্রামে রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবার চলে আসেন তিনি।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক সংগঠন। যে কেউ ফরম কিনতে পারেন। কিন্তু মনোনয়ন কে পাবেন, তা দলের মনোনয়ন বোর্ড নির্ধারণ করবে।

মেয়র নাছির আরও বলেন, ‘১–১১–এর সময় মনজুর আলমের ভূমিকা সম্পর্কে অনেকে জানেন। তিনি তিন–চারবার রাজনীতির গতি পরিবর্তন করেছেন। এখন আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন।’

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৫ সালে নির্বাচন বর্জনের পরই মনজুর আলমকে বিএনপি বহিষ্কার করে। তিনি আসলে আওয়ামী লীগের লোক। নিজ ঘরে আবার ফিরে গেছেন।’

চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আফছারুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনজুর আলম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন কি না জানি না। কিন্তু ৩০ হাজার টাকা থাকলে এবং নির্বাচনী এলাকার নাম উল্লেখ করলে যে কেউ আওয়ামী লীগের ফরম কিনতে পারেন। মনজুর আলমও সেভাবে ফরম কিনেছেন।’

এসব বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই দলটির সঙ্গে আমার বাপ–দাদা সম্পৃক্ত ছিলেন। আমিও আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীকে আওয়ামী লীগের কোন জায়গায় যোগ দিতে হয়? আমার ভাতিজাও এখন আওয়ামী লীগের এমপি।’

মনজুর আলম বলেন, ‘আমি সমাজসেবা করে আসছি। এমপি হলে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের সেবার পরিধি বাড়ানো যায়। এ জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছি। বাকিটুকু নেত্রী (শেখ হাসিনা) দেখবেন।’