নির্বাচনে ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই: অলি আহমদ

কর্নেল (অব.) অলি আহমদ । ফাইল ছবি
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ । ফাইল ছবি

২০–দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বলেছেন, ২০–দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সরকারের ওপর। কারণ, এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ এ মন্তব্য করেন।

অলি আহমদ বলেন, গত পরশু নির্বাচন কমিশন আইজিকে এক নির্দেশে বলেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কোনো মিছিল যেন না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা সারা দেশের লাখ নেতা-কর্মীর ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এতে নারী কর্মীসহ বিএনপির প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন মারাত্মক আহত হন। তিনি বলেন, ঘটনার পর বিএনপি কার্যালয় যখন জনশূন্য, তখন একদল হেলমেটধারী লোক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই হেলমেট বাহিনী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। তখন কর্তব্যরত সাংবাদিকদের অত্যাচার করেছিল।

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পর যে ছবি পাওয়া গেছে, সে ছেলেটি ছাত্রলীগের কর্মী বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মাত্র কয়েক দিন আগে ক্ষমতাসীন দল চার হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। তারা ঢাকঢোল বাজিয়ে মিছিল করেছে। নির্বাচন কমিশন তখন কোনো নির্দেশনা বা কোনো আদেশ জারি করেনি। প্রশাসন ও পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অন্যদিকে, বিএনপির জনসমাগম দেখে সরকার শঙ্কিত। সরকার মনে করল, এবার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। গদি ছাড়তে হবে। এই ভয়ে তারা নিরপরাধ নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হলো।’

শান্তিপূর্ণ নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করা হয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, ‘দুদিন আগে লাখ লাখ নেতা-কর্মী শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কী হলো যে গতকাল হামলা চালাতে হলো? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন মারা গেছে। তাতে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

নির্বাচনে মাঠে থাকার বিষয়ে ২০–দলীয় জোটের জ্যেষ্ঠ নেতা অলি আহমদ বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, আমরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাব, তাহলে ভুল করবেন। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে মোকাবিলা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মতো ভোটযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে অংশগ্রহণ করতে হবে। এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে যায় না।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ–মনোনীত সভাপতিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্য অপসারণ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান অলি আহমদ। তিনি বলেন, অন্যথায় কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যত ধরনের অন্তরায় আছে, সেটা সরাতে হবে, সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে, কিন্তু মাঠে–ময়দানে যখন আমরা যাই, তখন দেখি মন্ত্রীরা এখনো পুলিশ পাহারায় চলে। কয়েক দিন আগে এরশাদ রংপুরে গিয়েছিলেন, সেখানে তাঁকে পুলিশের এসপি নিরাপত্তা দিয়েছেন। তাহলে বিএনপি, ২০–দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও পুলিশের নিরাপত্তা দিতে হবে। না হলে এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে এক সময় জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ২০–দলীয় জোটের শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ, জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।