জরিপ আর দলীয় প্রধানের তালিকায় ঝুলছে প্রার্থীভাগ্য

>
  • আ.লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৪ হাজার ২৩ জন 
  • আগ্রহীদের ডেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
  • বৃহস্পতিবার সংসদীয় বোর্ডের দ্বিতীয় বৈঠক হয় 
  • ৫-৬টি জরিপ প্রতিবেদন ধরে পর্যালোচনা চলছে 
  • মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা ঢাকা ছাড়ছেন না 
  • শরিকদের জন্য ৬৫-৭০ আসন থাকছে

একাধিক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য আর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার করা খসড়া তালিকাকে প্রার্থী বাছাইয়ের নিয়ামক ধরে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। গতকালের বৈঠকে জরিপ প্রতিবেদনগুলোয় চোখ বুলিয়েছেন সদস্যরা। আজ আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা শুরু হতে পারে।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ৪ হাজার ২৩ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বুধবার গণভবনে তাঁদের ডেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংসদীয় বোর্ডের দ্বিতীয় বৈঠক হয়। সেখানে তিনি বলেন, এত প্রার্থীর মধ্যে ৩০০ জনকে বেছে নেওয়া কঠিন কাজ। মনোনয়ন বোর্ডে বসে যাচাই-বাছাই করে ঠিক করা হবে। এ সময় তিনি নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার জন্য বিএনপির সমালোচনা করেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, তরুণ ভোটার ৪০ শতাংশ। তাই তরুণ ভোটারদের টানতে পারেন এমন প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। দলের বাইরেও নিজের ভোটব্যাংক আছে এমন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

সূত্র জানায়, গত দুই বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়নি। জরিপ প্রতিবেদনগুলোতে চোখ বুলিয়েছেন সবাই। এখন প্রায় প্রতিদিনই বোর্ডের বৈঠক হবে। সব সদস্য মিলে জরিপ পর্যালোচনা করার পর বিভাগ ধরে ধরে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর দলীয় প্রধানের করা খসড়া তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে প্রার্থী তালিকা নিখুঁত করা হবে।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের কাছে দেশি-বিদেশি পাঁচ-ছয়টি জরিপ প্রতিবেদন আছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখনো আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পর্ব শুরু হয়নি। তিনি বলেন, মনোনয়নে যাতে জনমতের প্রতিফলন হয়, সে জন্য বোর্ডের সব সদস্য জরিপগুলো পর্যালোচনা করছেন। আজ শুক্রবার অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন ধরে ধরে পর্যালোচনা হতে পারে।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঢাকা ছাড়ছেন না। গণভবন, দলের ধানমন্ডি কার্যালয়, মনোনয়ন বোর্ডের নেতাদের বাসা-অফিসে দৌড়াদৌড়ি করছেন তাঁরা। দুজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত না হলে এলাকায় গিয়ে কর্মীদের কী বলব? এ জন্য ঢাকায় অপেক্ষা করছি।’ একজন বললেন, কোনো রকম একটা সংকেত পেলেও দুশ্চিন্তা কমে যায়। আরেকজন বললেন, প্রতিদিনই ঢাকায় এবং নির্বাচনী এলাকায় কর্মীদের পেছনে বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। আবার শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয় আছে। তারও একটা মানসিক চাপ আছে। তাই যত তাড়াতাড়ি মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়, ততই ভালো।

শরিকদের জন্য ৬৫-৭০ আসন
শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ৬৫ থেকে ৭০টি আসন শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে, এমন একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। এটা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। তিনি বলেন, জয়ী হতে পারেন—এমন প্রার্থী শরিকেরা কতজন দিতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে সংখ্যাটা।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে চায়। গতকালও ৩৯–দলীয় একটি জোট এসেছিল। তারা নির্বাচনে একসঙ্গে থাকতে চায়। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের জোটে আসবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট এখনো আমাদের কাছে আসন তালিকা পাঠায়নি। তালিকা পাঠানো হলে আমরা তাদের সঙ্গে বসব।’

উৎসবে পানি ঢেলেছে বিএনপি
বৈঠকে গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে। সবাই যখন নির্বাচনে এল, তখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হলো। কিন্তু জনগণ যখন সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর হয়, তখন বিএনপির খুব খারাপ লাগে। তিনি বলেন, ‘তারা সেই উৎসবে পানি ঢালে। সেটাই কালকে আমরা দেখলাম। কোনো কথা নেই বার্তা নেই। সেখানে বিএনপির এক নেতা মিছিল নিয়ে এল। সেখানে মারপিট, এতগুলো পুলিশ আহত হলো। তিনটা গাড়িও পোড়াল।’ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর, যখন সাধারণ মানুষ ভোট দেবে, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবে; ঠিক সে সময়ই বিএনপি তাদের স্বরূপে আবার ফিরে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে তারা যে অগ্নি–সন্ত্রাস করেছিল, ২০১৫ সালে অগ্নি–সন্ত্রাস করেছে, আবার ঠিক সেই অগ্নি–সন্ত্রাস শুরু করল। মানে অগ্নি–সন্ত্রাস ছাড়া, মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ানো ছাড়া বিএনপি কোনো কাজ করতে পারে না।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।’