নরসিংদীতে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত শতাধিক

নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জের ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর টেঁটাযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত স্কুলছাত্রের নাম তোফায়েল হোসেন (১৮)। আজ শুক্রবার সকালে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তোফায়েল বাঁশগাড়ী বালুয়াকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছেলে। এবার বাঁশগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। এ ঘটনায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন, মামুন মিয়া (২৫), সুমন মিয়া (২৬) ও সুমন মিয়া (২৬)। এছাড়াও শরীরে টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় রফিকুল (৩৪) নামের একজন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, আজকের টেঁটাযুদ্ধে কমবেশি শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদ সরকারের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিল। গত মার্চে মারা যান শাহেদ সরকার এবং গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। তাদের মৃত্যুর পরও তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ থামেনি। আজ শুক্রবার ভোরের দিকে দুই পক্ষের সমর্থকেরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পরস্পরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তোফায়েল।

বাঁশগাড়ী গ্রামের আলমগীর হোসেন নামের একজন জানান, মূলত আধিপত্য বিস্তার ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণেই শাহেদ সরকার ও সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। তারা দুজন মারা গেলেও তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ থামেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকেই বাঁশগাড়িতে থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ভোর হতেই দুই পক্ষের হাজার হাজার লোক এই টেঁটাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আগের মতো এখন আর শুধু টেঁটা নিয়ে যুদ্ধ হয় না। এখন যুক্ত হয়েছে পিস্তল। আজও দুই পক্ষের সমর্থকেরা পিস্তল, ককটেল, রাম দা ও টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলছিল।

নিহত তোফায়েলের বাবা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, গ্রামে দুই পক্ষের ঝগড়া-বিবাদ সারা বছরই লেগে থাকে। তাই ছেলেকে ভালোভাবে পড়াশোনা করানোর জন্য নরসিংদী শহরের সংগীতা এলাকায় থাকি। শুধু স্কুলের পরীক্ষা দেওয়ার সময় গ্রামে পাঠাতাম তাকে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাঁশগাড়িতে গিয়েছিল কয়েকটি বই আনতে। গিয়েই বন্ধুদের ডাকে এই ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হক জানান, সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তোফায়েল নামের যুবকটিকে মৃত অবস্থায় পাই। তার মাথার পেছনের অংশে গুলির চিহ্ন আছে। লাশের ময়নাতদন্ত হলে বিস্তারিত বলা যাবে। আরও তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

রায়পুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মোজাফফর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।