ঢাকাকে দুষছে মিয়ানমার

আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা পরিবার।  ফাইল ছবি
আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা পরিবার। ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য মিয়ানমার এখন বাংলাদেশের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করবে না—এমন অপপ্রচার শুরু করেছে তারা।

গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত দলকে রাখাইনে পাঠানোর মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারাও আদি নিবাসে ফিরতে রাজি হয়নি।

মিয়ানমারের সরকারি দৈনিক দ্য নিউ গ্লোবাল লাইট অব মিয়ানমার গতকাল শনিবার তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে প্রত্যাবাসন শুরু না–ও হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ের টেলিফোনে আলাপের সময় প্রত্যাবাসন নিয়ে এ কথা বলেন।

মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে বিবিসির বর্মিজ সার্ভিসকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। দুই পক্ষের মন্ত্রী পর্যায়ে এ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।

তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্‌রিয়ার আলম বিবিসিকে বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো বা না পাঠানোর কোনো সম্পর্ক নেই। দুই রাষ্ট্রের সম্মতিতে ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। কারণ, যাঁরা (রোহিঙ্গা) যাবেন, তাঁরা রাজি হননি।’

শাহ্‌রিয়ার বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রত্যাবাসনের জন্য ১৫ নভেম্বর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আস্থার সংকটের জায়গাটি বাধার সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গারা এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে আছে। যেকোনো সময় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক।

এদিকে জোর করে রোহিঙ্গাদের না পাঠানোয় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ইউনিসেফের মুখপাত্র ক্রিস্টফ বুলিয়েরেখ। শুক্রবার জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ইউএনএইচসিআরের মতো ইউনিসেফের কাছেও রোহিঙ্গারা রাখাইনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

ক্রিস্টফ বুলিয়েরেখ বলেন, কক্সবাজারের শিবিরে ইউনিসেফের কর্মীরা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি জরিপ চালান। জরিপে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যাবে না বলে মত দিয়েছে।

রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা তৈরির স্বার্থে সম্প্রতি জাপান রোহিঙ্গা মাঝিদের (স্থানীয় নেতা) একটি প্রতিনিধিদলকে সেখানে পাঠানোর প্রস্তাব করে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক আলোচনায় জাপান ওই প্রস্তাব দিয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গতকাল বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গা মাঝিদের নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল রাখাইনে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেই সব শেষ হয়ে যায় না। সহায়ক পরিবেশের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের একটি দলকে রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দেবে মিয়ানমার। এখন মিয়ানমারকে ওই প্রস্তাবের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে হবে জাপানকে। শুধু প্রস্তাব দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, জাপানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটা বোঝা উচিত। বৃহস্পতিবার কূটনীতিকদের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সময় সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে।

১৪ মাসে রাখাইনে ৬৬৯ শিশু হত্যা: জাতিসংঘ

ইউএনবি জানায়, জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত ১৪ মাসে মিয়ানমারে ৬৬৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। নৃশংসতার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৩৯টি শিশু। হতাহত এসব শিশুর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা।

শুক্রবার জাতিসংঘ প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে পরবর্তী ১৪ মাসে মিয়ানমারের বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত–বিষয়ক মহাসচিবের কার্যালয় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিখ বলেন, মিয়ানমারে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে।