আসন ভাগাভাগিতে স্বপ্ন ভঙ্গ হতে পারে ১১ প্রার্থীর

পুরান ঢাকার ওয়ারী, গেন্ডারিয়াসহ পাঁচটি থানা নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। আসনটিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ১১ জন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসন ভাগাভাগিতে কপাল পুড়তে পারে তাঁদের।

২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে এই আসনে বেড়েছে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসাধারণ সম্পাদক লিটন হোসেন, সহসম্পাদক হামিদুর রহমান, গেন্ডারিয়া থানা সভাপতি মকবুল হোসেন খান টিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য শফী বিক্রমপুরী, সাবেক বৃহত্তর কোতোয়ালি থানার যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাশেম ও সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন। তাঁদের মধ্যে কাজী আবুল বাশার, হামিদুর রহমান, মকবুল ইসলাম ও ইশরাক হোসেনকে নিয়ে আলোচনা বেশি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা থাকলেও এলাকায় এখনো বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ইশরাক হোসেন ছাড়া অন্যদের মামলার কারণে প্রায় সময়ই আত্মগোপনে থাকতে হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশী ১১ জনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি করে মামলা আছে।

কাজী আবুল বাশার বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত এসেছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সাদেক হোসেন খোকার বিকল্প প্রার্থী ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, মাঠের রাজনীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাঁকে পাঁচবার কারাগারে যেতে হয়েছে। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা করা হয়েছে।

তবে দলীয় নেতা–কর্মীদের অনেকে বলছেন, পারিবারিক কারণে এগিয়ে আছেন ইশরাক হোসেন। এলাকায় তাঁর পরিবারের ব্যাপক প্রভাব আছে। পারিবারিক অবদান বিবেচনায় নিয়ে এই আসন থেকে ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেবে বিএনপি।

জানা গেছে, ইশরাক হোসেন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা করেছেন। লন্ডনে থাকাকালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্রায় তিন বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন।

ইশরাক হোসেন বলেছেন, এই নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে তাঁর বাবা নিরলস চেষ্টা করেছেন। চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনোভাবে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় আট বছর এলাকার মানুষ অভিভাবকশূন্য। বাবার পথ অনুসরণ করে আমিও এলাকার উন্নয়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। এ ছাড়া আমার অর্জিত প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াব।’

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মকবুল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজে মনোনয়ন ফরম তুললেও এই আসন থেকে ইশরাক হোসেনই মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, দল যদি আসনটি ছেড়ে দেয় বা অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

এদিকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে কপাল পুড়তে পারে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল গণফোরাম। গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় (চট্টগ্রাম-১৪ আসন), থাকেন পুরান ঢাকায়।

সুব্রত চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৪ অথবা ঢাকা-৬ আসন—এই দুই আসনের যেকোনো একটি থেকে নির্বাচন করতে চান। এর বাইরে তিনি অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচন করবেন না। কিন্তু চট্টগ্রাম-১৪ আসনের আরেক দাবিদার ২০–দলীয় জোটের সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি তাঁর নির্বাচনী এলাকা। এই আসন থেকে তিনি আগেও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন।

এলডিপি ও ২০–দলীয় জোট সূত্র জানায়, আসনটি অলি আহমদ অন্য কারও জন্য ছেড়ে দিতে নারাজ। জোটের সমন্বয়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় এই আসনে অলি আহমদের পাল্লা ভারী। তাই এই আসনে সুব্রত চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

সুব্রত চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন না পেলে তাঁর আরেক বিকল্প ঢাকা-৬ আসন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ায় এই আসনটি (ঢাকা-৬) তাই বিএনপিকে ছেড়ে দিতে হতে পারে। বিএনপি এই আসনটিতে ছাড় দিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে পারেন সুব্রত চৌধুরী।

জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১৪ ও ঢাকা-৬ আসন থেকে আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছি। নির্বাচন করলে এই দুই আসনের একটি থেকে করব। এর বাইরে অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচন করব না।’