চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে উৎকণ্ঠায় প্রার্থীরা

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন কে পাবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরাসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখানে। সবাই চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় রয়েছেন।

ওই আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১৫ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি থেকে সংগ্রহ করেছেন ছয়জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে দুজন নিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম। অপরদিকে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও জোটের হয়ে দলের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন একজন।

এই আসনে এরশাদ-পরবর্তী সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জামায়াত। এখানে জামায়াতের প্রার্থী দুবার এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন খুলনা-৬ আসনটি তাঁদেরই। অপরদিকে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ধারণা, ওই আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তাঁদের পক্ষে।

ওই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হক। তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।

২০০৮ সালে ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী সানা। ২০০১ সালে বিএনপি জোট থেকে জয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের শাহ মো. রুহুল কুদ্দুস। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শাহ মো. রুহুল কুদ্দুসের কাছে মাত্র ৭০০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান নূরুল হক।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বর্তমান সাংসদ শেখ মো. নূরুল হক, তাঁর বড় ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম, সাবেক সাংসদ সোহরাব আলী সানা, পাইকগাছা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক গাজী মোহাম্মদ আলী, সদস্যসচিব মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকতারুজ্জামান বাবু, কেন্দ্রীয় নেতা প্রেম কুমার মণ্ডল, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জি এম মহসিন রেজা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ, আলমগীর হোসেন, আল মামুন, জি এম কামরুল ইসলাম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

তাঁদের মধ্যে আকতারুজ্জামান বাবুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। তবে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দাবি করছেন, এখনো কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

খুলনা-৬ আসনের বর্তমান সাংসদ শেখ মো. নূরুল হকের নানা সমালোচনা থাকলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতার কারণে এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। খুলনার মধ্যে নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্যও আলোচিত তিনি। গত কয়েক মাসে তিনি ৫০টির বেশি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন বলে দাবি তাঁর।

চলতি বছরের শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করেন, তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে।

মনোনয়ন দৌড়ে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা প্রেম কুমার মণ্ডলও জনসমর্থন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, খুলনা-৬ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের। এর আগে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে। তাই জোটের প্রার্থী না দেওয়াই ভালো। এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে—এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে মনে করছেন তিনি।

>চূড়ান্ত মনোনয়ন কে পাবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরাসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন দলটির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু ও পাইকগাছা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর। শফিকুল ইসলাম বলেন, আসনটি মূলত জামায়াতের। সেখানে জামায়াতের পরেই রয়েছে জাতীয় পার্টির ভোটার।

অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির জেলা কমিটির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা, সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, পাইকগাছা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, কয়রা উপজেলা সভাপতি মোমরেজুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শামসুল আলম পিন্টু এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম।

এবার ওই আসনে খুলনা মহানগর জামায়াতের আমীর আবুল কালাম আজাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। নাশকতার মামলায় বর্তমানে তিনি কারাগারে।  মোমরেজুল ইসলাম বলেন, জামায়াত এলাকায় বেশ তৎপর রয়েছে। তবে বিএনপি থেকে প্রার্থী দিলে জেতার সম্ভাবনা বেশি।

জামায়াতের খুলনা মহানগরের সহসাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, ওই আসনে প্রতিবারই আওয়ামী লীগ অথবা জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকেই দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে।