আমায় নহে গো, ভালোবাসো মোর 'ভোট'

নির্বাচনে তরুণদের গুরুত্ব থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে তার প্রতিফলন আশানুরূপ হয়নি। ছবি: প্রথম আলো
নির্বাচনে তরুণদের গুরুত্ব থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে তার প্রতিফলন আশানুরূপ হয়নি। ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনে তরুণদের গুরুত্ব থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে তাঁদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না। তরুণদের সবচেয়ে বড় আগ্রহের জায়গা হচ্ছে কর্মসংস্থান। কিন্তু সেখানেই যত গলদ। একদিকে কর্মসংস্থানের অভাব, অন্যদিকে ফাঁকা পদগুলো পড়ে থাকে বছরের পর বছর। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাত ব্যবহার করে কিংবা নতুন নতুন ব্যবসার উদ্যোগ নিতেও বাধার সম্মুখীন হন তরুণেরা।

এর ফলে ভোটের সময় তরুণদের মন জোগাতে রাজনৈতিক দলগুলো যতটা ব্যস্ত থাকে, ভোট শেষে তরুণদের প্রতি সেই ভালোবাসা, তাঁদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখতে ততটাই উদাসীন থাকে ক্ষমতাসীন দলগুলো।

বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলগুলোর নির্বাচনের ইশতেহারে যথাযথ কর্মসংস্থানের কথা উল্লেখ করলেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান হয়নি তরুণদের। যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সরকারি চাকরিতে এখনো প্রায় তিন লাখ পদ খালি আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হলেও ব্যান্ডউইথড ইন্টারনেটে বড় বড় শহরেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের যথেষ্ট উদ্যোগ নেই। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের আগ্রহ বাড়লেও এ জন্য আগের ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। সব মিলে নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণেরা উপেক্ষিত।

নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবারের হালনাগাদ শেষে নতুন ভোটারের সংখ্যা ৪৩ লাখের বেশি। সব মিলিয়ে এবার ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখের বেশি। এই ভোটারদের প্রায় আড়াই কোটি তরুণ।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিলেন ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। ২০০৮ সালে ছিলেন ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার। অর্থাৎ গত ১০ বছরে তরুণ ভোটার বেড়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ। আগামী নির্বাচনে এরাই জয়-পরাজয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। তরুণদের ভোট যাঁরা বেশি পাবেন, তাঁরা নির্বাচনে জয়ী হবেন।

তরুণ ভোটারের চিত্র: সূত্র নির্বাচন কমিশন
তরুণ ভোটারের চিত্র: সূত্র নির্বাচন কমিশন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যদিও তরুণ ভোটারের কোনো সংজ্ঞা নেই, তবে ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সের ভোটারদেরই তরুণ ভোটার বলে বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দেশ সংজ্ঞায়িত করে থাকে। আমাদের মতো দেশে, মোট ভোটারের প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণ ভোটার। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬০ শতাংশ তরুণের সংজ্ঞায় পড়েন। এসব তরুণ ভোটারই পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। কাজেই তরুণ ভোটারদের ভোট প্রদানে যেমন উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন, তেমনি তাঁদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্বাচনী পরিবেশকে আরও উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। তরুণ ভোটারদের ভোট প্রদানে উৎসাহিত এবং নিরাপত্তা ও পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সরকার এবং কমিশন ছাড়াও গোটা সমাজের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। আর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ১৫ শতাংশের মতো। অর্থাৎ প্রতিটি আসনে গড়ে এই বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৫০ হাজারের কম-বেশি। তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

২০১৫ সালের শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়, শিক্ষিতদের মধ্যে বেকার বেশি। স্নাতক পাস বেকার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। যেখানে এসএসসি পাস বেকারের সংখ্যা সাড়ে ৭ শতাংশ। এক মাস কাজের জন্য প্রস্তুত থেকে সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করতে পারেননি, এমন মানুষের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া ইশতেহারে তরুণদের যথাযথ কর্মসংস্থানের কথা বলেছিল। একই ভাবে এই দল ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এরপরও লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ বেকার থেকে গেছেন। এর বাইরে নানা জটিলতায় মধ্যে প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জনবল যেতে পারে না।

সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে সফলভাবে আবেদন করেছেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী। এটাই কোনো বিসিএসে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীর আবেদন করার ঘটনা। এর আগে ৩৮তম বিসিএসে ২ হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। এটি ছিল আগের রেকর্ড।
এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বশেষ ১০ হাজার শিক্ষকের নিয়োগে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ২০ লাখ। খাদ্য অধিদপ্তরের ১ হাজার ১০০ জন নিয়োগের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ১৫ লাখ।
গত বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ৭ হাজার ৩৭২ কর্মকর্তা নিয়োগে ১০ লাখের বেশি প্রার্থী চাকরির আবেদন করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নিয়োগসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) বলছে, ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে এর আগে একসঙ্গে এত প্রার্থী আবেদন করেননি।

সরকারি চাকরিতে প্রায় তিন লাখ পদ খালি থাকলেও সরকারের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এসব নিয়োগ আটকে আছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে। সর্বাধিক পদ খালি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, ৫৮ হাজার ৯৮৯টি। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৪১ হাজার ৮৬৯ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ১২ হাজার ৮৩৭টি। এ ছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৪ হাজার ২৮৩টি পদ খালি রয়েছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত জুলাই মাসে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান। বিদেশে চিকিৎসাধীন মন্ত্রী সংসদে লিখিত জবাব দেন।

কোন মন্ত্রণালয় কত খালি: সূত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
কোন মন্ত্রণালয় কত খালি: সূত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

এ বছরের ফেব্রুয়ারি শুরু থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কোটা সংস্কারে রাজপথে নামেন। এটি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। পরে তাঁদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কার করা হয়।

সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা রাসেল সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু যেসব চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেখানেই লাখ লাখ আবেদন পড়ে। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এই বিশাল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ি। দিনের পর দিন চাকরির আবেদন করলেও চাকরি হয় না।’
তরুণদের একটি বড় অংশ এভাবেই চাকরি না পেয়ে দিনের পর দিন বেকার হচ্ছে। এই তরুণদের একটি বড় অংশ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আমাদের দেশে তরুণদের বড় ইস্যু হচ্ছে কর্মসংস্থান। শিক্ষিত বেকার এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। বেকার তৈরি হওয়ার দুটি কারণ। একটি হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাবে যোগ্য চাকরিপ্রার্থী না পাওয়া আর একটি হচ্ছে, যথেষ্ট চাকরির সুযোগ তৈরি না হওয়া। এটি সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে তা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। একটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে কিন্তু মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত পাওয়া যায় না।’

উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব নেই ইশতেহারে: বেকারত্বের বাইরে শিক্ষিত তরুণদের বড় একটি অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। অনেকেই বিদেশে থেকে যাচ্ছেন। অনেকে দেশে ফিরতে চাইলেও ভালো চাকরির সুযোগের অভাবে ফিরতে পারছেন না। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে গত দুটি নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের একটি দেশে পড়তে গেছেন ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যাঁরা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছি, তাদের জন্য সরকারের কোনো নির্দিষ্ট উদ্যোগ আমার চোখে পড়েনি। ভাষার পরীক্ষার (আইইএলটিএস) ফি অনেক বেশি। এটি কমানোর বিষয়ে সরকার চাইলে কিছু করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করার বিষয়ে সরকার আরও সহজ নিয়ম করতে পারে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ করার বিষয়ে চাইলে সরকার অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে তরুণেরা অনেক উপকৃত হবে।’
দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে এসে এক তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে আবার বিদেশে ফিরে গেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই তরুণ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর থেকে প্রথম হই। পরে পিএইচডি ডিগ্রি নিই দেশের বাইরে থেকে কিন্তু রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে আমার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি হয়নি। পরে যুক্তরাজ্যে এসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার আবেদন করি। পরে তারা আমাকে চাকরি দেয়। আমার দেশে ফিরে কিছু করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সেই সুযোগ না পেয়ে দেশের বাইরে চলে আসতে হয়।’

অবহেলিত তথ্যপ্রযুক্তি খাত: তরুণদের আগ্রহ ইন্টারনেটে। অনেক ফ্রিল্যান্সার ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশের কাজ করছে দেশে বসে। কিন্তু তরুণদের আগ্রহের এই বিষয়ে নির্বাচনের ইশতেহারে যথাযথ প্রতিফলন নেই। এখনো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শহরকেন্দ্রিক। মোবাইলে ফোর–জি সেবা এলেও শহরের বাইরে এর গতি আশানুরূপ পাওয়া যায় না। অনেকে ইন্টারনেটের গতির কম থাকায় ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তরুণ উদ্যোক্তা ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী নূর খান বলেন, ঢাকার বাইরে ইন্টারনেটের অবস্থা ভয়াবহ। যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে তাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাগবেই। তারা যদি মোবাইল কোম্পানি থেকে ডেটা কিনে কাজ করে, তাহলে লাভের বড় অংশ ডেটা খরচের পেছনে চলে যাবে। এই জন্য অনেক তরুণ ঢাকায় থাকেন। গতির অভাব ও সহজলভ্য না হওয়ায় আইটি খাত থেকে যে প্রত্যাশিত ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, তার অনেকাংশেই হয়নি।

বাড়ছে মাদকাসক্ত তরুণ: দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক, অর্থাৎ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০, যাঁদের একটি বড় অংশই তরুণ। আর ৭ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম, এমন শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি।

মাদকাসক্তের সংখ্যা নির্ধারণে দেশে প্রথমবারের মতো একটি সমীক্ষা পরিচালিত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এই সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মাদকাসক্ত। অন্যদিকে ৭ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়। দেশের সাতটি বিভাগের সাত বছরের ঊর্ধ্বে ১৯ হাজার ৬৬২ জনের ওপর বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসংস্থানের অভাব, পারিবারিক অশান্তি, মাদকাসক্ত বন্ধু, মাদকের সহজলভ্যতা—এসব কারণে মাদকাসক্ত তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। এ থেকে তাঁদের আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহারে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ থাকে না। নির্বাচনী ইশতেহারে এই মাদকাসক্ত তরুণদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনা ও পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে ও তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।

গুরুত্ব দিতে হবে তরুণদের: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ৫ নভেম্বর ‘তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন কোটি তরুণ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি নতুন ভোটার। যুবসমাজের দাবি এবং অধিকারগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় যুবসমাজের প্রত্যাশা ও প্রতিকারের প্রতিফলন থাকতে হবে। নতুন সরকারের বিভিন্ন নীতি ও যুব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়নে যুবসমাজের অংশগ্রহণ ও পরিবীক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

নির্বাচনের ইশতেহারে তরুণদের যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার কথা জানিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, তরুণ বা যুবকদের বিভিন্ন দিক ঠিকমতো রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে উঠে আসে না ও সরকারও আলাদা করে সেভাবে তাঁদের রেখাপাত করে না। তরুণদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। তাঁদের সংকীর্ণভাবে দেখা হয়। তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে নানাভাবে কাজ করার সুযোগ আছে। শিক্ষিত তরুণদের বাইরে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা নেই, এমন একটা বড় দল আছে। তাঁদের বিষয়ে গুরুত্ব কম। তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করতে হবে। এ ছাড়া তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের কিছু দিক আলোচনায় এলেও তাদের নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ আছে রাজনৈতিক দলগুলোর। এ ছাড়া যৌন হয়রানি বা মাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ইশতেহার নেই। এটি নিয়েও কাজ করতে পারে তারা।

সমাজতাত্ত্বিক ও গবেষক খন্দকার সাখাওয়াত আলী মনে করেন, ইশতেহারে তরুণদের যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি এর বাস্তবায়নকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যুবসমাজকে জনসম্পদে পরিণত করতে ও বেকার সমস্যা সমাধানে কর্মসংস্থানভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত তরুণদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার আগের তুলনায় বেড়েছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এটির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শুধু শহরের তরুণদের কথা ভেবে উন্নয়ন করলে চলবে না, গ্রামের বা পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণদের কথাও মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।