নারী মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি

উপরের বাঁ দিক থেকে জয়া সেনগুপ্ত, কিবরিয়া কেয়া, শামীমা শাহরিয়ার, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শাম্মী আক্তার ও সায়রা মহসিন
উপরের বাঁ দিক থেকে জয়া সেনগুপ্ত, কিবরিয়া কেয়া, শামীমা শাহরিয়ার, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শাম্মী আক্তার ও সায়রা মহসিন

স্বামী চারবার নির্বাচন করেছিলেন। দুবার জিতেছিলেন। পঞ্চম দফা নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় আকস্মিক মৃত্যু হয় স্বামীর। তিনি প্রার্থী হন এবং জেতেন। এটাই ছিল সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে কোনো নারীর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ মমতাজ ইকবাল এভাবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন।

মমতাজ ইকবালের স্বামী মেজর (অব.) ইকবাল হোসেন চৌধুরী দুবার স্বতন্ত্র ও দুবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। স্বামীর শূন্যতা পূরণে মমতাজ ইকবাল সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার বছরখানেক পরই ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান। সিলেট বিভাগে মমতাজ ইকবাল প্রথম কোনো নারী প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৩। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফজলুল হক আসপিয়া পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৯৬৪ ভোট। মমতাজ ইকবালের মৃত্যুর পর এই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৮ সালে মমতাজ ইকবালের স্বামীর শূন্যতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিজয়ের বিষয়টি সিলেট বিভাগে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীর সংখ্যা রেকর্ডসংখ্যক। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মমতাজ ইকবালের মৃত্যুর পর আর কেউ সরাসরি প্রার্থী না হলেও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সাংসদ শামসুন নাহার শাহানা। সুনামগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের
সাবেক ভিপি শামসুন নাহার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পদে আছেন। সুনামগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় সরাসরি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আরও দুজন। তাঁদের একজন সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সাবেক সাংসদ ও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর স্ত্রী, বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্ত। অপরজন সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-তাহিরপুর-ধরমপাশা) আসনে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার। তিনি জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। মনোনয়ন প্রত্যাশায় তাঁদের পক্ষে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিত জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও ধরমপাশায় সমান তৎপরতা দেখা গেছে।

সিলেটে অতীতে কোনো নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও এবার সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে স্বামীর অবর্তমানে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। এই আসনের সাবেক সাংসদ বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ‘নিখোঁজ’। একই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শিউলী আক্তার।

>একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রী নুরুন্নাহার বেগম। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি। মৌলভীবাজার-২ আসনে (কুলাউড়া) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মনোনয়ন চেয়েছেন নেহার বেগম। তিনি কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার জেলা জাসদের সদস্য। মৌলভীবাজার-৩ আসনের (সদর-রাজনগর) বর্তমান সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসিন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সায়রা স্বামীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী।

হবিগঞ্জ জেলায় চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটিতে সরাসরি নির্বাচন করতে চান দুজন। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ হয়ে তাঁকে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে কোনো জনপ্রতিনিধির পা পড়েনি, সেখানে যাতায়াত করতে। হবিগঞ্জ-৪ আসনে (চুনারুঘাট-মাধবপুর) বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ শাম্মী আক্তার। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্থানীয়বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন।

নারী মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি অভিনন্দনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য গৌরী ভট্টাচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সংরক্ষিত চাই না, চাই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নারীদের বিজয়ী দেখতে। এবারই প্রথম অধিকসংখ্যক নারী সরাসরি নির্বাচন করার প্রত্যাশা আমাদের জন্য এক আশাবাদ। দলগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তাঁদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতাকে সাহস জোগাতে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’