'এপার-ওপার এক হয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রসার ঘটাতে হবে'

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী টলি ক্লাব চত্বরে আয়োজিত ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। পাশে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক (ডানে) ও অভিনেত্রী জয়া আহসান (বাঁয়ে)। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী টলি ক্লাব চত্বরে আয়োজিত ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। পাশে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক (ডানে) ও অভিনেত্রী জয়া আহসান (বাঁয়ে)। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র লিট ফেস্ট বা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের বাংলা এক। দেশ ভাগ হয়েছে, কিন্তু বাংলা ভাগ হয়নি। এপার-ওপার আমাদের ভাষা এক। আমাদের সংস্কৃতি এক। তাই বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রসারের জন্য এপার-ওপারে বাংলা সাহিত্যের প্রসার ঘটাতে হবে।’

আজ রোববার সকালে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী টলি ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এই সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক রাসকিন বন্ড। দিনভর সাহিত্য উৎসবে ৫টি সভাস্থলে ৪০টি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সাহিত্য সম্মেলনের সহযোগিতায় ছিল অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ-নজরুল এখনো আমাদের সাহিত্যে সমুজ্জ্বল। রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা রবীন্দ্রনাথ।’ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ দেশের কল্যাণ বয়ে আনে না। এর বিরুদ্ধে সজাগ হতে হবে।

লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলা তো অখণ্ডই ছিল। ভারতও অখণ্ড ছিল। তারপর বাংলাদেশ। বাংলাদেশটি হয়েছে ভাষার নামে। আমাদের ভাষা বাংলা, আর আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের সাহিত্য বাংলা। সীমান্তরেখা আমাদের দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও, আমাদের সাহিত্যকে ভাগ করতে পারেনি। আমাদের সাহিত্য এক, সংস্কৃতি এক। এই বাংলা সাহিত্যকে আমাদের ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বব্যাপী।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১১ ক্রিকেটার বাঙালি। তাঁরা সাক্ষাৎকার দেন বাংলাতে। এটিই বাংলাদেশের গর্ব।

অনুষ্ঠানে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে ভারতীয় সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রাসকিন বন্ডকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। রাসকিন বন্ড উৎসবের উদ্বোধন করে বলেন, ‘সাহিত্যের ভক্ত আজও বেশি এই কলকাতায়। আমার প্রিয় শহরও এই কলকাতা। আমি প্রচুর লিখেছি “টাইমস অব ইন্ডিয়ায়”।’

এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য কলকাতার প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকরকে অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ভারতকে নিয়ে ছোটগল্প লেখার জন্য পুরস্কৃত করা হয় পাঁচজনকে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধন করা হচ্ছে। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
আনুষ্ঠানিকভাবে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধন করা হচ্ছে। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলা হচ্ছে একটি বৃত্ত। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ মিলে এই বৃত্ত পূর্ণ। আমাদের মাঝে রয়েছে সীমান্তরেখা। সেই সীমান্তরেখা আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ভাগ করতে পারেনি।’

রোববার দুপুরে ফারলনে আয়োজিত ‘ফাউন্ড ইন ট্রান্সলেশন: অ্যা নিউ বিগিনিং’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আজকের দিনে অনুবাদ সাহিত্যের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। বিশ্বের সেরা বহু লেখকের লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। আমার নিজের লেখা বইও বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো বাংলা ভাষায় সমৃদ্ধ।’

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলেন। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মহান একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষার আন্দোলন হয়েছিল বাংলাদেশে। এখানের সাংসদেরা সংসদে বাংলায় কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণ দেন বাংলায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ সাইনবোর্ড এখনো লেখা হয় বাংলায়। তাই বাংলাদেশে এখনো কদর বাংলা ভাষার। তবুও বাংলাদেশের বহু কবি-সাহিত্যিকের রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এখনো অনূদিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বইপ্রেমীরাও এখন অনুবাদ সাহিত্যের দিকে ঝুঁকছেন।’

লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে অতিথি ও দর্শকেরা। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে অতিথি ও দর্শকেরা। ভারত, ২৫ নভেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এ সময় আনিসুল হক তাঁর লেখা ‘ব্যালাড অব আয়েশা’ বা ‘আয়েশামঙ্গল’ ইংরেজিতে পড়ে শোনান। এই আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন কন্নড় সাহিত্যিক ও অনুবাদক বিবেক সংভাব, সাহিত্যিক ও অনুবাদক অরুণাভ সিং, ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

অন্যদিকে রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্য আদার বাংলা: লিটারেচার অ্যাক্রস বর্ডারস’ শিরোনামের আরেকটি সেমিনার। এতে যোগ দেন সেলিনা হোসেন, আনিসুল হক, জয়া আহসান, ফারাহ গজনবী, প্রবাল কুমার বসু প্রমুখ।