নির্বাচন ব্যবস্থাই পাল্টে দেবে সিপিবি

সিপিবি
সিপিবি

ক্ষমতায় গেলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার আনার কথা বলছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলছে, ১ শতাংশ মানুষের পকেট ভরার উন্নয়ন নয় বরং গণতন্ত্র প্রসারিত করে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফলকে ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় তারা।

সিপিবির নির্বাচনী ইশতেহারে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকছে বলে দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আগামী ১ ডিসেম্বর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে দলীয় কার্যালয়ে এই ইশতেহার প্রকাশ করা হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সিপিবির সূত্র জানায়, ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ স্লোগানকে সামনে রেখে সিপিবি তার ইশতেহার প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ করেছে। এতে প্রায় ৩০টি ধারায় দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হবে। এতে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার ঘোষণার যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক ন্যায়বিচার এবং বাহাত্তরের সংবিধানের ৪ মূলনীতির বাস্তবায়ন হয়নি। তাই ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১-এর ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বর্তমান সময়ের সুনির্দিষ্ট বাস্তবতায় তার নবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে সিপিবি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

নির্বাচনী ব্যবস্থার কী ধরনের সংস্কার করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ৫৩ দফা দাবিতে অনেক দিন ধরে লড়াই করছি। এর মধ্যে সংসদে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বণ্টনের (প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসনসংখ্যা) দাবি অনেক পুরোনো। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, না ভোট চালু করা, নির্বাচিত প্রতিনিধি ভালো কাজ না করতে পারলে স্থানীয় জনগণ যেন প্রার্থী রিকল (পুনঃ ভোটের আবেদন) করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার মতো বিষয়গুলো থাকবে।’

রুহিন হোসেন বলেন, এ ছাড়া দরিদ্র মেহনতি মানুষেরা যেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, সে সুযোগ করে দেওয়া হবে। জামানতের বিধান সংশোধন করে আয়ের অনুপাতে নির্ধারণ করা হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি কাস্তে প্রতীকে ৮৩ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও গতকাল বুধবার শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৭৭ জন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। জোটগতভাবে বামপন্থী আটটি দল দেড় শর বেশি আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ৩০টির মতো আসনে এখনো একাধিক দলের প্রার্থী রয়েছেন। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ৬০টি আসনে মই প্রতীকে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কোদাল প্রতীকে ১৫ প্রার্থী, গণসংহতি আন্দোলন জোটের কোদাল বা স্বতন্ত্র প্রতীকে তিন প্রার্থী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিও জোটের প্রতীকে ৯টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। ওই কমিটির একটি সূত্র জানায়, জনগণের মধ্যে কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টি ও কর্মক্ষম প্রতিটি মানুষের বিকাশের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে চায় সিপিবি। এ কারণেই সিপিবি তাদের চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে। ইশতেহারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন, নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোকে ইশতেহারের সম্ভাব্য বিভিন্ন শিরোনাম করা হয়েছে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য হ্রাস, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে শূন্যসহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ, বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন-মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, কৃষি, কৃষক, গ্রামীণ মজুরের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ, শ্রমিক ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিৎসার নামে ব্যবসা বন্ধ, তারুণ্যের সম্পদ কাজে লাগানো, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ-দুস্থদের অধিকার নিশ্চিত করা, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলো দলটির ইশতেহারে থাকবে।